বাসস দেশ-৮ : দিনাজপুরে ১৮ টি ইটভাটা উচ্ছেদ ও ৫ টির জরিমানা

137

বাসস দেশ-৮
ইটভাটা-উচ্ছেদ-জরিমানা
দিনাজপুরে ১৮ টি ইটভাটা উচ্ছেদ ও ৫ টির জরিমানা
দিনাজপুর, ৮ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে লাইসেন্স বিহীন ১৮টি ভাটা ইট নির্মাণ কাজ ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতায় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অপর ৫টি ভাটা থেকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
দিনাজপুর এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুশফিকুর রহমান জানান, দেশের চলমান অবস্থায় লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা মালিকদের ইট প্রস্তুত না করার জন্য একাধিক বার সতর্ক করে দেয়া হয়। তারপরে ইটভাটা মালিকরা লাইসেন্স গ্রহণ না করেই ইট প্রস্তুত করায় তাদেরকে চিহ্নিত করে ওই ভাটাগুলো গত ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতায় ইট প্রস্তুত কার্যক্রম ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রুটিপুর্ণ অবস্থায় ভাটা নির্মাণ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কার্যক্রম হালনাগাদ না থাকায় ৫টি ভাটায় ৩ লাখ টাকা করে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা কালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সদস্যদের সহায়তা নেয়া হয়।
সুত্রটি জানায়, ইতিপুর্বেও গত ১৪ ডিসেম্বর ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দিনাজপুর ও বিরল উপজেলায় ৪টি অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদ করলেও সেগুলোর অধিকাংশ আবারো নতুন করে গড়ে তোলা শুরু করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উচ্ছেদ করা ইটভাটাগুলো হচ্ছে, জেলার বিরল উপজেলার কাঞ্চনঘাট মহাদেবপুরের সোনালী বিক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স, রয়েল ট্রেডার্স, সাইদুর ট্রেডার্স, সদর উপজেলার মোহন ট্রেডার্স, হোসেন ট্রেডার্স, রায়হান ট্রেডার্স, পার্বতীপুর উপজেলার হক এন্টার প্রাইজ, ন্যাশনাল এন্টার প্রাইজ, জুয়েল ট্রেডার্স, চৌধুরী এন্টার প্রাইজ, নবাবগঞ্জ উপজেলার মন্ডল ট্রেডার্স, সরকার এন্টার প্রাইজ, লতিফ এন্টার প্রাইজ, মকবুল এন্টার প্রাইজ, বিরামপুর উপজেলার হারুন এন্টার প্রাইজ, ঘোড়াঘাট উপজেলার নুরুল এন্টার প্রাইজ ও প্রভাত ট্রেডার্স।
যে ৫টি ভাটায় জরিমানা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- সদর উপজেলার মোহন এন্টার প্রাইজ, আতাউর এন্টার প্রাইজ, হাবিব এন্টার প্রাইজ, বোচাগঞ্জ উপজেলার চৌধুরী এন্টার প্রাইজ বীরগঞ্জ উপজেলার খালেক এন্টার প্রাইজ। প্রথম দফায় একই ভাবেব জেলার আরো ৪টি ভাটা লাইসেন্স না থাকায় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সচেতন মহলের অভিমত দিনাজপুরে ইটভাটার আগ্রাসনে ফসলী জমি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বিপর্যস্ত হচ্ছে, পরিবেশ।ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত উপরিভাগের মাটি। এতে করে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। জমি হারিয়ে ফেলছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা। তেমনি যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব ইট ভাটায় সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার কালো বিষাক্ত ধোয়ায় এলাকার ফসল,গাছ-গাছালি বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশের চরম ক্ষতি করছে।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. শাহাদৎ হোসেন খান লিখন ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আবু বকর সিদ্দিক সরকার জানান, মাটির উপরিভাগে যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব পদার্থ থাকে তা নীচের মাটিতে থাকে না। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পুরণ হবে না।
তিনি জানান, কোন নিয়ম-নিতির তোয়াক্কা না করে ৩ ফসলী জমি,সংরক্ষিত বনাঞ্চল,আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঝেই গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। এসব ইট ভাটার নেই কোন পরিবেশের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স। তার পরও বিভিন্ন কৌশলে তা চলছে। উচ্চ আদালতের মিথ্যা আদেশ দেখিয়ে ইটভাটা চালানোর অভিযোগে প্রায় অর্ধশত ইটভাটার মালিক জেল-হাজতও খেটেছেন। মামলারও চলছে বেশকয়েকজন ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। বীরদর্পে এর সত্যতাও স্বীকার করছেন, অবৈধ ইটভাটার মালিকরা।
ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর গেল বছরের ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ১৪টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ এবং ১০টি ইটভাটাকে ৪৩ লাখ টাকা জরিমানা করে।
দিনাজপুর ইট প্রস্তুতকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের সাথে কথা বলা হলে তিনি এবিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/১৪০৮/কেজিএ