আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে উপকারভোগীদের আর্থিক বুনিয়াদ সুসংহত হয়েছে

694

॥ সাজ্জাদ গনি খাঁন রিমন ॥
যশোর, ৮ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : জেলায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে। উপকারভোগীদের আর্থিক বুনিয়াদ সুসংহত হয়েছে। তাদের বাড়িতে যেন দুধে-ভাতে বাঙালী আর মাছে-ভাতে বাঙালীর পরিবেশ।
ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং স্বপ্ন সোপান এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ ১০টি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য-অংশীদারিত্ব্যের ভিত্তিতে তহবিল গঠন ও পারিবারিক খামারের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন।
এই প্রকল্পে গঠিত গ্রাম উন্নয়ন সমিতির প্রত্যেক সদস্য মাসে ২০০ টাকা সঞ্চয় জমা দিলে এর বিপরীতে সরকার সমপরিমাণ বোনাস প্রদান করেন এবং একই সাথে সরকার বাৎসরিক দেড় লাখ টাকার আবর্তক তহবিল প্রদান করেন। এভাবে ২ বছরে সমিতির তহবিল প্রায় ৯ লাখ টাকায় উন্নীত হয় এবং তহবিলের মালিকানা স্থায়ীভাবে সমিতির সদস্যদের। সদস্যরা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আয়বর্ধক কর্মকান্ডে বিনিয়োগ করেন। নিয়মিত উঠান বৈঠক করে সাপ্তাহিক কিস্তিতে নয় বরং সুবিধাজনক সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন। ইউনিয়নের ওয়ার্ড বা গ্রাম পর্যায়ে ৪০ জন মহিলা এবং ২০ জন পুরুষকে নিয়ে এই সমিতি গঠন করা হয়।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প যশোর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলায় মোট ২ হাজার ২৬৫টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। এসব সমিতির ১ লাখ ৯ হাজার ৩৯৪ জন সদস্য, প্রায় ৭০ কোটির ৮১ লাখ ৫২ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা করেছেন। এই জমার বিপরীতে সরকার সদস্য পর্যায়ে প্রায় ৫৭ কোটি ১২ লাখ ৯৮ হাজার এবং সমিতি পর্যায়ে প্রায় ৮৮ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার অনুদান প্রদান করেছে। সকল সমিতির সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৪১৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, এর মধ্যে বর্তমানে মোট ঋণ স্থিতির পরিমাণ ২২৩ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
সমিতির সদস্যবৃন্দের আর্থিক বুনিয়াদ আরো সুসংহত করতে চলছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম। প্রকল্পের উপজেলা কার্যালয় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যালয় হিসেবে কাজ করছে। প্রকল্পের সমিতির সমূহের মোট তহবিল স্থানান্তরিত হবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে। সমিতির সদস্য সমিতি থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন। সমিতি ঋণের সার্ভিস চার্জ ৮ শতাংশ হলেও ব্যাংক ঋণের সার্ভিস চার্জ ৫ থেকে ৮ শতাংশ।
যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির একজন সফল উদ্যোক্তা মো. আয়ুব হোসেন। সমিতি থেকে প্রায় ৭ বছর আগে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেছিলেন ছাগল পালন। তার ছাগল পালন বেড়ে এখন তা ছাগলের খামারে পরিণত হয়েছে। আয়ুব হোসেন বলেন, সমিতি করতে যেয়ে সংসারে শুধু সচ্ছলতাই আসেনি, সচেতনতাও এসেছে। এখন স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করি, বিশুদ্ধ পানি পান করি এবং অন্যদেরও সচেতন করি।
যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সফল সদস্য জনাব নাসিমা আক্তার এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, তিনি শুভ পরিবেশ বান্ধব কলমের উদ্যোক্তা। তিনি উক্ত সমিতি থেকে কর্মসৃজন ঋণ নিয়ে নিজ বাড়িতে বড় পরিসরে পরিবেশ বান্ধব কলম তৈরি শুরু করেছেন।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঝিকরগাছা উপজেলার সমন্বয়কারী মোছা. ছালমা খাতুন বলেন, প্রচলিত বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি উপজেলার গদখালী ও পানিসারা এলাকায় ফুল চাষ ও উৎপাদন করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সমিতিসমূহের সদস্যরা।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প চৌগাছা উপজেলার সমন্বয়কারী মো. কামাল হোসেন জানান, বিদ্যমান সমিতিগুলোর মনিটরিংসহ প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে কাজ করছি আমরা। কিছু-কিছু এলাকায় সমিতির উদ্যোক্তাবৃন্দ এতটাই সফল হয়েছেন যে, ওইসব এলাকায় তাদেরকে অনুসরণ করে একই ধরণের উদ্যোগের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী মো. জাকির হুসাইন বাসসকে বলেন, এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দরিদ্র্য জনগোষ্ঠির পারিবারিক পর্যায়ের দারিদ্র্যতা নির্মূল হবে। তৃণমূল পর্যায়ের দারিদ্রতা দূর হলে বাংলাদেশ খুব সহজেই পৌঁছে যাবে সমৃদ্ধির সোপানে।