বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : অভিবাসী কর্মীদের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

142

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-অভিবাসী দিবস ভাষণ
অভিবাসী কর্মীদের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা যেসব দেশে কাজ নিয়ে যান সেখানকার সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এবং তাঁর সরকার সব সময় সে দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভূমিকা তুলে ধরেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমার দেশের মানুষ আমার কাছে অনেক সম্মানের এবং বাইরে গিয়ে যেন তারা অসম্মানে না পড়েন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, সে জন্যই চলমান মুজিববর্ষে এবারের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের জন্য আমাদের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মুজিববর্ষের আহ্বান দক্ষ হয়ে বিদেশ যান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ কর্মী তৈরি লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য বিদ্যমান ৭০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অচিরেই যুক্ত হবে উপজেলা পর্যায়ে আরও ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
এছাড়া, মুজিববর্ষেই উপজেলা পর্যায়ে আরও ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যাতে নিজের এলাকায় বসে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কারিগর হিসেবে প্রবাস গমনেচ্ছুরা যেতে পারেন, বলেন তিনি।
পিএমও সূত্র মতে, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ মেয়াদে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ দশমিক ৫ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বিদেশে।
নিউ ইয়র্কে ২০১৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অভিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে তাঁর দেয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্লোবাল কমপ্রাক্ট ফর মাইগ্রেশন (জিসিএম)’ সেটা অনুমোদন করে এবং তা বাস্তবায়নেও সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কারণ, যুগ যুগ ধরেই মানুষ এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাচ্ছে। কাজেই সেখানে গিয়ে নিজের কাজটি যেন নিজে করতে পারে।
’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীলভাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে পরনির্ভরশীল করে তুলেছিল-এমন অভিযোগ এনে সেখান থেকে তাঁর সরকার দেশকে মর্যাদাবান করে গড়ে তোলার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তারও উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যখন থেকে সরকারে এসেছি তখন থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়েছি যে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা আত্মমর্যাদাশীল হব, আত্মনির্ভরশীল হব। যে কারণে দেশের বাজেটের প্রায় ৯৭/৯৮ ভাগই নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল তাঁর সরকার গড়ে তুলছে এবং সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। সেখানেও দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন পড়বে। তাই, দেশেও ভবিষ্যতে কাজের অভাব হবে না।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দা ও কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২০ সালে রেকর্ড ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাওয়া গেছে এবং সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত রেমিটেন্সের উপর দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা চালু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের দেয়া প্রণোদণার ফলে প্রবাসি রেমিটেন্সও আজকে বেড়েছে, সেজন্য তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’
শুধুমাত্র বৈধ ও নিবন্ধিত অভিবাসী মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিধানটিও করোনা পরিস্থিতিতে পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসে যারা ক্ষতিগ্রস্থ অবশ্যই তাদেরকে আমাদের দেখতে হবে।’
করোনার কারণে বিশ^ অর্থনীতির স্থবিরতায় অনেক প্রবাসী কর্মীদের দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়ায় তাদের পূনর্বাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকে আজকে করোনার কারণে কাজ হারাচ্ছেন। তারপরেও আমি বলবো যারা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা যে প্রণোদনা দিচ্ছি সেখান থেকে বা ঋণ নিয়ে নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন।
তিনি বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীদের আর্থিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য ৭ শ’কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়াত্ত বিশেষায়িত ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’-এর মাধ্যমে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে প্রবাসীগণ এই ঋণ নিতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা হতাশ না হয়ে পূর্নোদ্যমে নিজেরা নিজের দেশে কাজ করুন।’
আমাদের পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বহু মেগা প্রজেক্ট অব্যাহত রয়েছে, যেখানে বহু কর্মী কাজ পেয়েছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতার ভান্ডার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে তাদের আরো নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের জন্য নামমাত্র প্রিমিয়ামে বিশেষ বীমা স্কিম চালু করা হয়েছে এবং যেসব দেশে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মী কর্মরত আছেন সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে পর্যায়ক্রমে শ্রম-উইং চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধনসহ বর্তমানে শ্রম উইং-এর সংখ্যা ১৬ থেকে ২৯টি-তে উন্নীত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সময়ে দেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের উল্লেখ করে দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসীদেরকে দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আসছে তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশীরাও দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ, প্রবাসীদের জন্য তিনটি ব্যাংকের কর্মকান্ড চালুর পাশাপাশি, আমরা বিভিন্ন ভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৫৩/আরজি