মারধর-ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় : বিচারিক প্রতিবেদন

210

ঢাকা, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : নারায়ণগঞ্জে সেই স্কুলছাত্রীর ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ডে) থাকাকালে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ শিকার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনার সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধানের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌসের এ প্রতিবেদন বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চে আজ উপস্থাপন করা হয়।
আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ১৩ জানুয়ারি দিন রেখেছেন।
হাইকোর্টে আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা, যৌক্তিকতা ও মামলার নথি তলব চেয়ে গত ২৫ আগস্ট পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন করেন। পরে ২৭ আগস্ট শুনানি শেষে ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় সাবেক তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। মামলার নথিসহ হাজির হতে নির্দেশ দেন বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তাকে। সেই অনুসারে তারা হাজির হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যাখ্যা দেন। এরপর আদালত ২৪ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারিক অনুসন্ধানে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানের জন্য ১৯ নভেম্বর আরও একমাস সময় চান নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। সেই অনুসারে সময় দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। সে অনুযায়ী আজ বিচারিক প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
হাইকোর্টে আবেদনকারী পাঁচ আইনজীবী হলেন-আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির ও মো. মিসবাহ উদ্দিন।
ঘটনার বিবরণী উলে¬খ করে শিশির মনির বাসস’কে জানান, গত ৪ জুলাই পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়। গত ৬ আগস্ট নিখোঁজ স্কুলছাত্রীর বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ আব্দুল¬াহ, রকিব ও খলিল নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে তারা বলেন, ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন। শিশির মনির বলেন, ‘ধর্ষণের পর নদীতে মরদেহ ফেলে দেওয়া স্কুলছাত্রীর ৪৯ দিন পর জীবিত প্রত্যাবর্তনের’ খবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর আদেশ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জে মৃত কিশোরীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় বিচারিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন হাইকোর্টে আজ দাখিল হয়।
শিশির মনির বলেন, প্রতিবেদন বলছে, পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ডে) থাকার সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের মতামতে আরও উল্লেখ রয়েছে, আইন অনুসারে আসামিদের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনো অনিয়ম বিচারিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়নি।
ওই কিশোরী আদালতকে জানান, ইকবাল নামের এক যুবককে বিয়ে করে বন্দর এলাকার এক ভাড়া বাড়িতে সংসার করছে সে। শিশির মনির বলেন, জবানবন্দি নেয়ার পর আসামিদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু ২৩ আগস্ট ওই ছাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায়। আসামিরা কীভাবে ধর্ষণ ও হত্যা সম্পর্কিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, যেখানে ওই ছাত্রী অক্ষত অবস্থায় ফেরত এসেছে। আদালতের আদেশে বিচারিক তদন্তে স্বীকারোক্তির দেয়ার বিষয় উঠে এসেছে।