প্রিমিয়ার লিগ: বছরের শুরুতেই হোঁচট খেল লিভারপুল

206

সাউদাম্পটন, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : পরাজয় দিয়ে বছর শুরু করেছে প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। সোমবার রেডসরা ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছে সাউদাম্পটনের কাছে। এ নিয়ে লীগে টানা তিন ম্যাচে জয়বিহীন থাকলো জার্গেন ক্লপের দল।
সেন্ট মেরিস স্টেডিয়ামে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই ড্যানি ইনগিসের দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সাউদাম্পটপন । শেষ পর্যন্ত ঐ গোল আর শোধ করতে পারেনি রেডসরা। গুরুত্বপূর্ণ এই তিন পয়েন্টে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে সাউদাম্পটন। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার সাথে সাথে সেইন্টস ম্যানেজার রাল্ফ হ্যাসেনহাটেল কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে গোল ব্যবধানে পিছনে ফেলে লিভারপুল টেবিলের শীর্ষ স্থানটি ঠিকই ধরে রাখলো। কিন্তু রেড ডেভিলসদের থেকে তারা এখন এক ম্যাচ বেশী খেলে ফেলেছে। আগামী ১৭ জানুয়ারি এ্যানফিল্ডে ইউনাইটেডের মুখোমুখি হবে লিভারপুল।
২০১৮ সালের মে মাসে সর্বশেষ টানা তিনটি প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে জয়ী হতে পারেনি লিভারপুল। ম্যাচ শেষে ক্লপ বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে মুহূর্তটি বেশ অস্বস্তিকর ছিল। যেখানে আমরা সবাই জানতে পারছি যে এই ধরনের সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়। আমাদের অবশ্যই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে এবং এর মধ্যই দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।’
গত তিন মাসে লিগে প্রথম পরাজয়ে জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে একজন সেন্টার-ব্যাককে খুঁজে নিতে লিভারপুলকে তাগিদ দিবে বলেই অনেকে মনে করছেন। ইনজুরি আক্রান্ত ভার্জিল ফন ডাইক, জো গোমেজ ও জোয়েল মাটিপের অনুপস্থিতিতে মধ্যমাঠে প্রথম পছন্দ হিসেবে ফ্যাবিনহো ও জর্ডান হেন্ডারসনকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন ক্লপ।
শেষ তিনটি ম্যাচে কোন গোল করতে না পারা সাউদাম্পটনের ইউরোপীয়ান ফুটবলে খেলার আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে আসছিল। কিন্তু ম্যাচ শুরুর দুই মিনিটেই মধ্যেই লিভারপুলের সাবেক স্ট্রাইকার ইনগিসের দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যাওয়া উজ্জীবিত সাউদাম্পটনকে ধরার সাধ্য ছিলনা রেডসদের। জেমস ওয়ার্ড-প্রাউসের কার্লিং ফ্রি-কিক থেকে বক্সের ভিতর কোন সুবিধা করতে পারেননি ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ড। সেই সুযোগে ইনগিস লিভারপুল গোলরক্ষক এ্যালিসন বেকারকে পরাস্ত করে দলকে এগিয়ে দেন। ক্লপ বলেন, এটা শুধুমাত্র ধীরে শুরু করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। বরং গোল হজমের পর পুরো ম্যাচটাই কঠিন হয়ে উঠেছিল।
করোনা পজিটিভ হওয়ায় কাল সাউদাম্পটনের মূল একাদশে ছিলেন না গোলরক্ষক এ্যালেক্স ম্যাককার্থি। অন্যদিকে ইনজুরির কারনে দলের বাইরে ছিলেন ওরিয়ল রোমেউ, জানিক ভেস্টারগার্ড ও চে এ্যাডামস। ২০১৯ সালের মে মাসের পর সেইন্টসদেও প্রথম দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ফ্রেসার ফর্স্টার। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাবেক এই গোলরক্ষককে পুরো ম্যাচে কোন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলতে পারেনি লিভারপুল ফরোয়ার্ডরা। ২১ বছর বয়সী বদলী ইংলিশ মিডফিল্ডার ন্যাথান টেলা অল্পের জন্য বিরতির আগে স্বাগতিকদের ব্যবধান দ্বিগুন করতে পারেননি। একইসাথে টেলা সিনিয়র দলের হয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম গোলের সুযোগটিও হাতছাড়া করেছেন।
প্রথমার্ধে ক্লপ শিষ্যরা যে পরিমান রক্ষনাত্মক কৌশলে খেলেছে বিরতির পর ছিল তার উল্টো চিত্র। স্বরুপে ফিরে এসে সাম্প্রতিক সময়ের ট্রেডমার্ক ভঙ্গিমায় লিভারপুল খেলা শুরু করে। লিভারপুলকে রুখতে সাউদাম্পটনকে বেশীরভাগ সময়ই নিজেদের অর্ধেই খেলতে হয়েছে। সাদিও মানের প্রচেষ্টা নষ্ট করতে ডিফেন্ডার জ্যাক স্টিফেন্স শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন। সেনেগালিজ এই তারকাকে বক্সের ভিতর আটকে দিয়ে কোনমতে পেনাল্টি থেকে রক্ষা পেয়েছেন কাইল ওয়াকার-পিটার্স। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে আসার পর কাল লিভারপুলের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে মূল একাদশে খেলতে নেমেছিলেন থিয়াগো আলচানতারা। কিন্তু এই স্প্যানিয়ার্ড সাউদাম্পটনের রক্ষনভাগকে ভাঙ্গতে পারেননি।
ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত সাউদাম্পটন বস হ্যাসেনহাটেল বলেছেন, ‘৯২ মিনিটের আগ পর্যন্ত আমি বিশ^াস করতে পারিনি আমরা আজ কি করেছি। আক্রমনভাগে তারা যে কতটা শক্তিশালী তা মাঠে না নামলে বোঝা যায়না। আমরা আজ নিজেদের গেম প্ল্যানে অটুট ছিলাম এবং সেভাবেই ম্যাচে এগিয়ে গেছি। যদিও এই ধরনের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জিততে হলে ভাগ্য একটি বড় বিষয়।’
ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে মানের একটি শট সহজেই রুখে দেন ফস্টার। গত মৌসুমে বেশ কয়েকটি ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় ছিনিয়ে নেয়া লিভারপুল অবশ্য এবার আর সফল হতে পারেননি। এর আগে তারা ওয়েষ্ট ব্রুম ও নিইক্যাসলের বিপক্ষেও পয়েন্ট হারিয়েছে।