বাজিস-২ : সরগরম কেরাণীগঞ্জের কামার পট্টি

125

বাজিস-২
কেরানীগঞ্জ-কামার পট্টি
সরগরম কেরাণীগঞ্জের কামার পট্টি
কেরানীগঞ্জ, ১৩ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : কেরাণীগঞ্জে ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে টুংটাং শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে শহরতলীর কামার পট্টিগুলো। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশালার কামাররা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে অবিরাম কাজ করছেন তারা। আগুনের শিখায় লোহাকে পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছুরি, দা, বটি, চাপাতি। যা পশু কোরবানির পাশাপাশি ব্যবহার করা হবে গোস্ত কাটার জন্য। এসব কিনতে এখন কামারের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, এ বছর এসব সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে।
কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা এখন বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
জিনজিরার তাওয়াপট্টি আগানগরের মাঞ্জাপট্টি ও নিউগুলশান সিনেমা হল সংলগ্ন বেশ কয়েকটি কামারশালায় গেলে, দূর থেকেই পাওয়া যায় হাপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ি পেটার শব্দ। লোহায় হাতুড়ির পেটায় ছড়াচ্ছে স্ফুলিঙ্গ। সেখানে যেন নেই কোনো দিন-রাত, অবিরাম চলছে কাজ আর কাজ। এসব কামারশালার কামাররা জানান, বছরের ১১ মাসে তাদের ব্যবসা হয় একরকম আর কোরবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয় আরেক রকম।
কামাররা জানায়, স্প্রিং লোহা (পাকা লোহা) ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়াও ব্যবহার করা হয় এঙ্গেল, ব্লাকবার, রড, স্টিং, রেললাইনের লোহা, গাড়ির পাত ইত্যাদি। অনেকে লোহা কামারদের কাছে এনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এর মজুরিও লোহাভেদে নির্ধারণ করা হয়। আর বেশিরভাগ কামারদের কাছ থেকেই লোহা কিনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে বা রেডিমেট বানানো জিনিস নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, লোহার মানভেদে একটি দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা (পাকা লোহা), আর কাঁচা লোহার দা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১০০ থেকে ৩৫০, পশু জবাইয়ের বিশেষ ছুরি ৫০০ থেকে ৩ হাজার, কুড়াল ৬০০ থেকে ১ হাজার, বঁটি ৩০০ থেকে ৮০০, চাপাতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে দেশীয় এসব দা-বটির পাশাপাশি চীন থেকে আমদানি করা বিভিন্ন মান ও আকারের ছুরি-চাপাতিও বিক্রি হয় এখানে। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়, চাপাতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, মাঝারি আকারের ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় এবং বটি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিনজিরা তাওয়াপট্টি এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, কয়লার দাম বাড়ায় অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী মাল তৈরি করতে পারছি না। বন্যার কারণে ঠিকমতো কয়লার সরবরাহ হচ্ছে না। তিনি জানান, গত বছর প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে এ বছর প্রতি বস্তা কয়লার দাম পড়ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই লোহার এসব সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
আগানগর নিউগুলশান সিনেমা হল সংলগ্ন ব্যবসায়ী সুধীর কামার বলেন, আশা করি গত ঈদের চেয়ে এবার ঈদে বিক্রি বেশি হবে। দা, বঁটি, ছুরি ও চাইনিজ কুড়াল এগুলো ঈদ এলে বেশি বিক্রি হয়। তবে ঈদের তিন থেকে চার দিন আগে বেচাকেনা অনেক বেশি হয়। এখন একটু কম বিক্রি হচ্ছে, কারণ এখন শুধু অর্ডার আসে কয়েকদিন পর ডেলিভারি দেয়া শুরু করলেই বিক্রি বেড়ে যাবে। তবে এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে বঁটি।
জিনজিরা তাওয়াপট্টি এলাকায় দা-বঁটি কিনতে আসা ক্রেতা আতাউর বলেন, আসলে ঈদ কাছাকাছি চলে এলে ভিড় বেড়ে যাবে আর তখন কামাররা যন্ত্রপাতি ভালোভাবে না বানিয়ে কোনোমতে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়। তাই একটু আগেই এসেছি, বসে থেকে ভালোভাবে বানিয়ে নেয়ার জন্য।
বাসস/সংবদদাতা/মরপা/১৬০০/মোজা/মরপা