দেশে কোন পরিবার আর গৃহহীন থাকবে না : পলক

835

নাটোর, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সারাদেশে ৯ লাখ গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করে বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকীতে পর্যায়ক্রমে তাদের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। দেশে কোন পরিবার আর গৃহহীন থাকবে না।
প্রতিমন্ত্রী পলক আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিংড়া উপজেলার মাঝগ্রাম এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের শুধু বিজয়ই উপহার দেন নি, দেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। আমাদের সংবিধানে সংযোজিত দেশের সকল মানুষের গৃহ নির্মাণসহ পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭১’র পরাজিত শক্তিরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে চেয়েছিল। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। জনদরদী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পূণর্বাসিত করার কার্যক্রম শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে দেশের নয় লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। মুজিব শতবর্ষে সারাদেশে এক হাজার ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫ হাজার ৭২৬টি গৃহ নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে, আগামী ১৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এসব গৃহ হস্তান্তর করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, করোনাকালীন সময়ে উন্নত অনেক দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বে শুধু করোনা সংকটই নয় একই সাথে বন্যা পরিস্থিতিও মোকাবেলা করা হয়েছে। নিরন্ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে, কর্মহীন মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের কারনে আমাদের দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়নি। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি অনেক সমৃদ্ধ। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির ২৫টি দেশের একটি হবে।
পলক আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’র আধুনিক রুপ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবনধারায় প্রযুক্তির সংযোজন করায় দূর্নীতি ও হয়রানি দূর হয়েছে, জীবন হয়েছে সহজ ও সুন্দর। ঘরে বসেই মানুষ তাদের কাংখিত সেবা পাচ্ছেন। ২০১৭ সাল থেকে চালু হওয়া কল সেন্টারের মাধ্যমে মানুষ জরুরী স্বাস্থ্য সেবা, দুর্ঘটনার উদ্ধার সন্ত্রাস ও নির্যাতনের প্রতিকার পাচ্ছেন। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামে বসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন, কৃষকরা পাচ্ছেন নতুন প্রযুক্তি আর বাজারজাতকরণ সুবিধা, সরকারি দপ্তরে ই-নথি সেবার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে এবং অফিস বন্ধের সময়েও নাগরিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী মাঝগ্রাম এলাকায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন।
প্রতিমন্ত্রী নির্মিতব্য বাড়ির সুফলভোগী গৃহপরিচারিকা চায়না খাতুনের কাছে গেলে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভূমিহীন ও গৃহহীন চায়না খাতুন আসন্ন নতুন বাড়ি পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, নামাজ পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যে দোয়া করবো প্রাণখুলে। একইভাবে আবেগআপ্লুত হন সুফলভোগী ট্রলি ড্রাইভার সোহেল রানার স্ত্রী জাহেরা।
পরিদর্শনকালে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, সরকারের নির্দেশিত নীতিমালার আলোকে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে সুফলভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন-আল-ওয়াদুদ বাসসকে জানান, মুজিব শতবর্ষে জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৫৫৮টি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে সকল বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষ হলে জমিসহ উপকারভোগীদের হাতে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।
নর্মাাণাধীন গৃহ পরিদর্শন শেষে মাঝগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন প্রতিমন্ত্রী।