বাসস দেশ-১
সোহানী হোসেন-
তারকা খ্যাতি পেয়েছেন নাটোরের সোহানী হোসেন
।। ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন।।
নাটোর, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : একজন সোহানী হোসেন। একাধারে তিনি দেশের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল গ্রুপ এর কর্ণধার, উত্তর বঙ্গের ফাইভ ষ্টার রিসোর্ট ব্যবসায়ের পথিকৃৎ। পাশাপাশি লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সমাজসেবক আর একজন আদর্শ মা। ক্যান্সারকে হার মানিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী সোহানী হোসেন তাঁর বৈচিত্রময় নিরন্তর পথচলায় সফলতার স্বীকৃতিও পেয়েছেন একাধিক। পেয়েছেন মুম্বাই থেকে দাদা সাহেব ফালকে ফাউন্ডেশন পুরষ্কার, কলকাতা থেকে মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কার, দুবাই থেকে পারসন অব দ্যা ইয়ার এওয়ার্ড এবং গ্লোবাল মিউজিক এওয়ার্ড, দিল্লী থেকে উইমেন এচিভার এওয়ার্ড, ঢাকা থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র ও বাচসাস পুরষ্কারসহ মোট ২১টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। দক্ষিণ ভারতের গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করেছেন ডক্টর অব সোসাল ওয়ার্কস। বছর শেষে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল তাকে দিয়েছে ‘এভিনিউস অব সার্ভিস এওয়ার্ড’। এভাবেই তারকা খ্যাতি পেয়েছেন সোহানী হোসেন।
বৈচিত্রে ভরপুর ইউনিভার্সাল ফুডের পণ্যগুলো সারাদেশে সমাদৃত। মোবারক হোসেন রত্ন এর হাতে নব্বইয়ের দশকে গোড়াপত্তনকালে দেশজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের শুরুতে উদ্ভাবিত দেশের প্রথম টেষ্টি স্যালাইন। ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে এ গুণী উদ্যোক্তা হার মানলে ২০০৭ সালে ইউনিভার্সাল ফুডের হাল ধরেন তাঁর সহধর্মিনী সোহানী হোসেন। নতুন উদ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনে অনন্য হয়ে ওঠে এ শিল্প। বর্তমানে দেশের একমাত্র রেডি লাচ্চা সেমাইসহ ইউনিভার্সাল ফুডের পণ্য ৪০টি। বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই হাজারের বেশী মানুষের। করোনাকালে ব্যবসায়ের সংকটে এ শিল্পের কোন কর্মীকে কর্ম হারাতে হয়নি।
ইউনিভার্সাল ফুড ইন্ডাষ্টিজকে সবসময় সচল রাখতে এ কারখানার সাথেই চলছে একটি ওয়ার্কশপ। আর উৎপাদিত পণ্যের মোড়ক সরবরাহের জন্যে গড়ে তোলা হয়েছে তরঙ্গ প্যাকেজিং-যেখানে কাজ করেন অবহেলিত হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজন।
উদ্ভাবনে অনন্য সোহানী হোসেন ২০১৬ সালে পাবনার জালালাবাদে উত্তর বঙ্গের প্রথম পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট ‘রতœদ্বীপ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আট একর জমির উপরে প্রায় ৫০টি কক্ষে সজ্জিত এ রিসোর্ট হয়ে উঠেছে পর্যটকদের প্রিয় আঙিনা। কাজ চলছে আরো ৭২টি কক্ষের। সফলতার পথ পরিক্রমায় ২০১৮ সালে পাবনার বাংলাবাজারে তৈরী করেছেন ‘রুপকথা ইকো রিসোর্ট’। দুইটি সম্মেলন কেন্দ্র, সাতটি কটেজ আর অসংখ্য কক্ষে সুসজ্জিত এ রিসোর্টের মানও পাঁচ তারকা। পাবনা শহরে চলছে ‘রুপকথার কাব্য’ নামে একটি কফিশপ-যেখানে রয়েছে দেশী-বিদেশী বইয়ের সমাহারে সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। এখানে বই পড়তে পড়তে চলে কফি আড্ডা আর শপটির ব্যস্থপনার দায়িত্ব দেয়া আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কন্যাদের উপরে। বর্তমানে নাটোরে উত্তরা গণভবনের কাছাকাছি একটি গেষ্ট হাউজ তৈরীর কাজ এগিয়ে চলেছে। সোহানী হোসেনের পরিকল্পনায় তাঁর প্রিয় নাটোরে একটি আন্তর্জাতিক মানের ফাস্ট ফুড শপ গড়ে তোলার কথাও জানা গেল।
সফল ব্যবসায়ী কিংবা শিল্পপতি পরিচয়ের বাইরেও উজ্জ্বল তারা হয়ে জ্বলছেন সোহানী হোসেন। আশির দশকে জন্মভূমি নাটোরে সোনালী শিক্ষা জীবন অতিক্রমকালে স্কুল-কলেজ জীবনে তিনি ছিলেন সকলের প্রিয় মুখ। পড়াশুনার পাশাপাশি লিখতেন কবিতা, গাইতেন গান, আঁকতেন ছবি, আবৃত্তি করতেন কবিতা আর ছিলেন তার্কিক। এখন শখের বশে গান করলেও কবিতা লেখার নেশা ছাড়তে পারেননি। কবিতার সাথে কবি সোহানী হোসেনের যেন সহাবস্থান। এ পর্যন্ত তাঁর বেরিয়েছে ১৫টি কবিতার বই আর ‘মা’ নামে একটি উপন্যাস। কবিতা লিখতে লিখতে ঝুঁকে পড়েন চলচ্চিত্রে। নিজের লেখা ‘মা’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী করেছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সত্তা’। ঢাকার শাকিব খান ও কলকাতার পাওলী দাম অভিনীত তাঁর প্রযোজিত এ চলচ্চিত্রটি ২০১৭ সালে পাঁচটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ অর্জন করেছে অসংখ্য দেশী-বিদেশী পুরষ্কার।
মানবতার কল্যাণেও সোহানী হোসেনের পদচিহ্ন রয়েছে। তিনি ‘রোটারী ক্লাব অব রুপকথা’র চার্টার প্রেসিডেন্ট। ।
সাফল্যের এ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে অতীতে ফিরে গেলে দেখা যায় মেধা, সততা আর অদম্য সাহস সোহানী হোসেনকে আলোকিত করেছে। নেপথ্যে ছিলেন তাঁর মা লুৎফুন নাহার কল্পনার অনুপ্রেরণা।
স্বামীর মত তাঁরও শরীরে বাসা বাধা ক্যান্সার তাকে হার মানাতে পারেনি।তিনি পাঁচ কন্যা সন্তানের জননী।
সত্য ও সুন্দরকে সাথে নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আমি কখনো ক্লান্ত হবোনা বলে জানালেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সোহানী হোসেন। সোহানী হোসেন সম্পর্কে নাটোর দিঘাপতিয়া অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ ও দুূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি নাটোর জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি ইতিহাস খ্যাত নাটোরের রাণী ভবানীকে দেখিনি, তবে মানবদরদী সোহানী হোসেনকে দেখেছি। মানুষের কল্যাণে নিরন্তরভাবে পথ চলাতেই নাটোরের সোহানী হোসেন সফলতা পেয়েছেন।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/২১৫৫/নূসী