সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ফেনীতে উপকারভোগী ৯৫ হাজার মানুষ

337

// আরিফুল আমীন রিজভী //
ফেনী, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ফেনীতে ৯৫ হাজার ২৩৭ জন অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ভাতা পাচ্ছেন। ফেনী জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক (অতি.) সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় হতে প্রাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যসূত্রে জানা যায়, কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১১টি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে নগদ হস্তান্তর, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ফেনীতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
সরকারের এ কর্মসূচি প্রসঙ্গে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, সাধারণ মানুষকে সামাজিকভাবে নিরাপদ রাখা গেলে উন্নয়নের গতি আরও বেশি বেগবান হবে। বিভিন্ন ভাতার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় অসহায় মানুষদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। এ কার্যক্রমের আওতায় যে ব্যক্তির জায়গা নেই তাকে জায়গাসহ ঘর দেয়া হচ্ছে।
ফেনী জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ৪৩ হাজার ১৬০ জনকে মাসিক ৫০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা, ১৭ হাজার ৮২ জনকে মাসিক ৫০০ টাকা করে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, জনপ্রতি মাসিক ৭৫০ টাকা করে ১৬ হাজার ৭৬৯ জনকে প্রতিবন্ধী ভাতা, স্তর ভিত্তিতে ৯১১ জনকে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী (দলিত হরিজন) শ্রেণিতে প্রত্যেকে মাসিক ৫০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা, স্তর ভিত্তিতে ২৩০ জনকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি এতিমখানা ক্যাপিটেশন গ্রান্টের আওতায় ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের উপকারভোগী ১ হাজার ১৭০ জন ও ক্যান্সার আক্রান্ত ২৭৫ জনকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কামার, কুমার, জেলে, মুচিসহ আরও কিছু পিছিয়ে পড়া পেশাজীবীদের সরকার ভাতা প্রদানের আওতায় আনছে।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার বলেন, জেলা মহিলা অধিদপ্তর ৩টি প্রকল্পে কাজ করছে। দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) প্রকল্পে ৫ হাজার ৬১৩জন মহিলাকে বিতরণের জন্য ২ হাজার ২০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তাদের প্রত্যেককে মাসিক ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ৬ হাজার ৬৬৪ জনকে মাতৃত্বকালীন ও কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচির আওতায় ২ হাজার ৮৫০ জনকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ দুই প্রকল্পে মোট বরাদ্দের মধ্যে ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আহম্মদ কবির মজুমদার জানান, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় ২২০ জন বেকার যুবক ও মহিলাদের জন্য ৭০ লাখ ৬৪ হাজার ৭০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৮ সালে ২৯৩ জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়। তন্মধ্যে ২২০জন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংযুক্তি দেয়া হয়।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, ফেনীতে নির্মিত ১৪৪টি দুর্যোগ সহনীয় ঘরের মধ্যে ফেনী সদরে ১৮টি, দাগনভূঁঞায় ২৪টি, ছাগলনাইয়ায় ২৪টি, পরশুরামে ২৪টি, ফুলগাজীতে ২৪টি ও সোনাগাজীতে ৩০টি নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যারা গৃহহীন কিন্তু দুই বা তিন শতক জমি আছে অথচ ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নেই, তাদের দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের মনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো স্বামীর সংসারে সরকারের চাল দিয়েই ৪ সন্তানের মুখে ভাত উঠে।
মির্জানগরের বীরচন্দ্র নগর গ্রামের মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন জোৎস্না আক্তার। তিনি বলেন, সন্তান গর্ভে নিয়ে কাজ করা কষ্টকর। এ ভাতা আমার জীবন কাটাতে সাহায্য করছে।
মহামায়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গরীব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরী জানান, চলতি অর্থ বছরে ১৬০ জনকে ভিজিডি প্রকল্পের আওতায় এবং ২২০ জন অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধী কোটায় ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ৩ হাজার ৫০০ জন ব্যক্তি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সহায়তা পেয়েছে।
সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বাবু জানান, গত অর্থবছরে ইউনিয়নে ৭০জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা, ১১৬ জনকে ভিজিডি, ৬০জন বিধবাকে ও ৩৫জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ মির্জানগর ইউনিয়নের রৌশন আরা বলেন, বয়সের কারণে ঠিকমত চলতে পারিনা। ছেলে সন্তানেরও আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় টাকার জন্য সময়মত ঔষুধ খেতে পারিনা। ভাতার একটা সুবিধা পেলে উপকৃত হতাম।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যয়নরত রাকিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা স¤প্রসারণ, বাজেট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আইন প্রণয়ন ও বিভিন্ন কৌশলগত সংস্কারের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে কল্যাণকর রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।