এনইসি অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অনুমোদন দিবে কাল

740

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) দেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার (২০২১-২০৪১) আওতায় প্রতি-বছর গড়ে ৮ শতাংশ জিডিপি অর্জন এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) উপস্থাপন করতে আগামীকাল বৈঠকে বসছে।
এনইসি চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় সভাপতিত্ব করবেন। মন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবর্গ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা এনইসি সম্মেলন কক্ষ ও সচিবালয় থেকে এই সভায় অংশ গ্রহণ করবেন।
প্রতিবারের মতো এবারও, পরিকল্পনা কমিশনের আওতায় সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ (জিইডি) এই অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া কাঠামো তৈরি করেছে। এটি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়নে চারটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে প্রথম।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বছরে ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সাল এই পরিকল্পনার শেষ বছর।
পাশাপাশি, সরকার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়ে ১১ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাইছে। এর মধ্যে বিদেশে কর্মরতদের সংখ্যা হবে ৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন। এ ছাড়াও নতুন প্রায় ৭ দশমিক ৮১ মিলিয়ন জনশক্তি এই পরিকল্পনার সময়ে শ্রম-বাজারে প্রবেশ করবে।
এছাড়া, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের দারিদ্রের হার কমিয়ে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিকল্পনার আওতায় প্রয়োজনীয় কর্ম-কৌশল চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বাসস-কে বলেন, এই অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বিগত পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় একটি ‘প্রগতিশীল পরিকল্পনা’ হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, এই পরিকল্পনাটি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র দূরীকরণ, গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করা, আয় বৈষম্য চিহ্নিত করা ছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতা বাড়াতে আরো অনেক বেশি সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক-শিক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো আধুনিকায়নের লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় কারিগরি ভিত্তিক শিক্ষার আরো প্রসার ঘটবে।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, এই নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় দেশে আরো মেগা-প্রকল্প হবে। এছাড়াও চলমান মেগা-প্রকল্পগুলো গতিশীল হবে এবং অষ্টম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় এই প্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, সরকার বৈদেশিক ও উদীয়মান দেশগুলোর সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় বিদ্যমান বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন বাজার খুঁজে বের করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাতীয় সংবাদ সংস্থাকে বলেন, এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) ও ডেল্টা প্লান ২১০০ এর আওতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে সহায়তা করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘পাশাপাশি, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অভিজ্ঞতা এবং চলমান কোভিড-১৯ এর অভিঘাত মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে বিশেষ বিবেচনায় রেখে এই খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।’
পরিকল্পনা কমিশনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ২০২১ বছরের অর্থনৈতিক মূল্য বিবেচনা করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ৬৪৯৫৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকা প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, এই অর্থের মধ্যে ১২৩০১ দশমিক ২ বিলিয়ন টাকা বা ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ সরকারি খাত থেকে ৫২৬৫৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৮১ দশমিক ১ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে সংগ্রহ করা হবে।
কর্মকর্তা আরো বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫৭৪৮৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন টাকা বা ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিদেশী উৎস থেকে ৭৪৭৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন টাকা বা ১১ দশমিক ৫ শতাংশ সংগ্রহ করবে।
পরিকল্পনাটি মানসম্মত শিক্ষা, সার্বজনীন স্বাস্থ্য-সেবা পদক্ষেপ, বিদেশ ফেরৎ কর্মী ও কোভিড-১৯ এর কারণে অস্থায়ীভাবে বেকার হয়ে পড়া মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শ্রম বাজারে নারী-পুরুষ উভয়ের সমানভাবে প্রবেশ, আয়-বৈষম্য হ্রাস, সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা জাল নিশ্চিত, জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস, টেকসই নগরায়ন নিশ্চিত ও ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ পদক্ষেপ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে প্রধান করে অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের একটি প্যানেল এবং প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এই পরিকল্পনা তৈরিতে সরকারের রাজনৈতিক ও অথনৈতিক দর্শনের আলোকে তাদের মূল্যবান মতামত ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরে, পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি এই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করেছে।
জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি চলতি বছরের ১৩ ডিসেম্বর এর সর্বশেষ বৈঠকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছিল।
খসড়া পরিকল্পনাটি ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে মূল্যায়নের জন্য উপস্থাপন করা হয়।