বাসস দেশ-২ : বরিশালে ঐতিহ্যবাহী ৩১ টি ভাসমান বাজার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে

127

বাসস দেশ-২
ভাসমান-বাজার
বরিশালে ঐতিহ্যবাহী ৩১ টি ভাসমান বাজার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে
\ শুভব্রত দত্ত \
বরিশাল, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জেলার স্বরূপকাঠিতে শতাধিক বছর ধরে চলছে ঐতিহ্যবাহী ৩১ টি ভাসমান বাজার। স্বরূপকাঠির এই খালগুলোতে নৌকায় করে ঢেউয়ের তালে-তালে চলছে বেচাকেনা। ভাসমান এই বাজারগুলো পর্যটকদের কাছেও হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়।
সরোজমিনে দেখা গেছে, ভাসমান বাজারে আসা নৌকাগুলো এগিয়ে চলার দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন নৌ-শোভাযাত্রা। এই সৌর্ন্দয্যমন্ডিত দৃশ্য দেখলে অধিকাংশ মানুষের মন জুড়িয়ে যায়। সারাবছর ধরেই ওই সব অঞ্চলের মানুষ হাট-বাজারে যেমন যান নৌকায় চরে, তেমনি তাদের উৎপাদিত ফসল ও পণ্য আনা-নেওয়া, ক্রয়-বিক্রয়ও করে থাকেন নৌকায় করে। পাশাপাশি বর্তমানে ভাসমান এ হাটকে ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনাও বিগত সময়ের চেয়ে অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবে ভাসমান এসব হাট-বাজারে কর্মচাঞ্চল্যতা অনেকটাই বেড়ে যায় বর্ষা মৌসুমে।
জেলার বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফির্সার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশাল জেলার এক অংশ ও পিরোজপুর জেলায় নদী বেষ্টিত ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মধ্যে রয়েছে ৩টি বন্দরসহ ৩১ টি বাজার। বাজারগুলো হলো- সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নে ৩টি, সোহাগদল ইউনিয়নে ৩টি, বলদিয়া ইউনিয়নে ৬টি, দৈহারী ইউনিয়নে ৩টি, গুয়ারেখা ইউনিয়নে ৪টি, সারেংকাঠি ইউনিয়নে ১টি, আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নে ৩টি, জলাবাড়ি ইউপিতে ৩টি, সমুদয়কাঠি ইউপিতে ৪টি ও স্বরূপকাঠি পৌরসভায় ১টি বাজার রয়েছে। বেশির ভাগ বাজারই কোনো না কোনো ছোট বড় খালের পাশে অবস্থিত।
সূর্য ওঠা থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে এসব হাটে বেচাকেনা। কোনটা মধ্য রাত পর্যন্ত আবার কোনটা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এসব ভাসমান বাজারে দেখতে পাবেন পেয়ারার বাজার, ধান, চাল, সবজি চারা, ফুলের চারা, ফলের চারা, বিভিন্ন ধরনের বনাজি গাছের চারা, ধানের চারা, মৌসুমি ফল ও চারার বাজারসহ দেশের বৃহত্তম ভাসমান গোল কাঠের বাজার। আর এর সাথে বাড়তি আনন্দ হিসেবে থাকছে শুধুমাত্র নারীদের জন্য নৌাকায় ভাসমান সবজির বাজার। প্রতিটি বাজার সংলগ্ন থাকা খাল বা নদীতেই চলে পাইকারি ও খুচরা কেনাবেচার কাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও স্বরূপকাঠির পরিচিতি তার গোল কাঠ বা সৃজনকৃত কাঠের জন্য। এখানে দেশের সর্ববৃহৎ ভাসমান কাঠের বাজার ইন্দুরহাট ও মিয়ারহাটের মাঝখান থেকে বয়ে চলা শিতলা খালে শত বছর ধরে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার বসে। তবে স্বরূপকাঠি সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আকলম মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত খালের দুই পাড়েও এ ব্যবসা গড়ে উঠেছে। সুটিয়াকাঠি ও বলদিয়া ইউপিকে আলাদা করা খালের দুই প্রান্তে ডুবি বাজার পর্যন্ত এবং সোহাগদলের হাজির পুল খালের দুই প্রান্তে এ হাট বছরের প্রতিদিনই বসে।
এদিকে, বাংলার আপেল খ্যাত স্বরূপকাঠির পেয়ারা উৎপাদন হয় আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নে। পেয়ারা উৎপাদনকে ঘিরে গড়ে ওঠা এ বাজার বাংলা বছরের আষাঢ় মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে আশ্বিন মাসের ৩য় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। ছোট-ছোট হাত চালিত নৌকা কানায়-কানায় ভরা পেয়ারা দেখে মনে হবে এই বুঝি নৌকাটা ডুবে গেল। কিন্তু পেয়ারা চাষি দক্ষ হাতেই ডুবো-ডুবো নৌকা চালিয়ে হাটে আসেন। চারদিকে অবারিত সবুজের মাঝে ছোট-ছোট শাখা খাল আপনাকে সুন্দর বনের সৌন্দর্যের ছোঁয়া দিবে এটা নিশ্চিত। হলুদ রংয়ের পাকা ও সবুজ রংয়ের কাঁচা পেয়ারা দেখে আপনার লোভ সংবরণ করতে কষ্ট হবে। সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার এখানে হাটের দিন হলেও পেয়ারার মৌসুমে প্রতিদিনই হাট বসে এ অঞ্চলে। দেশ বিদেশ থেকে আগত হাজার-হাজার পর্যটককে মুখরিত থাকে সময়টা এ ইউপিতে।
অপরদিকে, শীত মৌসুম শুরুর সাথে-সাথে প্রতিদিন সকালে প্রায় প্রতিটি বাজারেই বসে মৌসুমি সবজির ভাসমান হাট। তবে মিয়ারহাট বন্দরে প্রতিদিন সূর্য উদয় থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত ছোট-ছোট ট্রলার বা নৌকায় বিভিন্ন প্রকারের সবজির সমাহারে মুখরিত হয় ক্রেতা-বিক্রেতা। বিকিকিনি হয় হাজার-হাজার টন কাঁচা সবজি। এছাড়াও, প্রতি বছর ভাদ্র মাস থেকে অগ্রাহায়ণ মাসে বসে কাঁচা-পাকা আমড়ার হাট আটঘর কুড়িয়ানায়।
এ ব্যপারে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফির্সার রিপন কুমার সাহা জানান, এ অঞ্চলে জনশ্রুতি রয়েছে ব্রিটিশ আমলের পূর্ব থেকে এ ভাসমান হাট বসেছে এখানে। নৌকায় করে বিকিকিনি করতে আসেন আশপাশের তিন জেলার মানুষ। স্বরূপকাঠি, ঝালকাঠি সদর ও বানারীপাড়ার লোকজনের যোগাযোগ মূলতঃ নৌকা কেন্দ্রীক। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। এসব এলাকায় রয়েছে বনজ, ফলদ ও বিভিন্ন গাছ। বহু পেয়ারা বাগানও রয়েছে এই অঞ্চলে। কৃষকের উৎপাদিত এসব পণ্য বিক্রি করার জন্য তিন জেলার সংযোগস্থল আটঘর কুড়িয়ানা এলাকায় গড়ে ওঠে ভাসমান সবজি হাট।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/১১০০/কেজিএ