চট্টগ্রাম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : চট্টগ্রামে মঙ্গলবার করোনায় আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ১৭৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ২১৭ জন। সংক্রমণের হার ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
গত ৯ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ দিনে করোনায় ২২ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ জন মারা যায় গত সোমবার। এছাড়া, গতকাল ২২ ডিসেম্বর এবং ১০, ১১, ১৩, ১৬ ও ১৮ ডিসেম্বর ২ জন করে এবং বাকী দিনগুলোতে একজন করে মারা যায়। সংখ্যার বিচারে এ সময়ে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ধরা পড়ে ১৪ ডিসেম্বর ২৮৫ জন এবং সর্বনিম্ন ১৭ ডিসেম্বর ৭৯ জন। সংক্রমণ হারে সর্বোচ্চ ছিল ১৪ ডিসেম্বর ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ১৩ ডিসেম্বর ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও করোনা বিশেষজ্ঞ টিমের প্রধান ডা. আবদুর রব আজ বাসস’কে জানান, ‘করোনায় সার্বিক মৃত্যুর হার বাড়েনি। এটা সত্য, চট্টগ্রামে কয়েকদিন টানা মৃত্যু হয়েছে। তবে এদের অধিকাংশই বয়স্ক। করোনার সাথে অন্য জটিলতাগুলোতে বেশি কাবু হয়ে পড়ায় এরা মারা যান।’
বৃটেনে নতুন বৈশিষ্টের করোনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাদের দেশের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন এটা ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক। সংক্রমণের পর খুব দ্রুত ফুসফুসে ছড়িয়ে যায়। ফলে আক্রান্তকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।’ সতর্কতা প্রসঙ্গে ডা. রব বলেন, ‘পৃথিবীর কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে বৃটেনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। আমাদের দেশেও সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের যাতায়াত রয়েছে। ফলে আমাদেরও এ ধরণের কঠোর কোনো সিদ্ধান্তে চলে যেতে হবে। এখানে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীর ৮টি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১ হাজার ৫৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত ১৭৮ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ১৬১ জন এবং ৫ উপজেলার ১৭ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে হাটহাজারীতে ৭ জন, রাউজানে ৫ জন, সীতাকু-ে ৩ জন এবং পটিয়া ও চন্দনাইশে ১ জন করে রয়েছেন। জেলায় মোট সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ২৪১ জন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ২২ হাজার ৫২৩ জন এবং উপজেলার ৬ হাজার ৭১৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনাক্রান্ত ২ রোগীর মৃত্যু হয়। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ৩৪৯ জন। এতে শহরের ২৫২ জন ও গ্রামের ৯৭ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন ২১৭ জন। মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা এখন ২৮ হাজার ১৮৮ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৩ হাজার ৭৮৬ জন এবং হোম আইসোলেশেন থেকে ২৪ হাজার ৪০২ জন। হোম আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ৩৮ জন ও ছাড়পত্র নেন ৩৫ জন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ২৯৩ জন।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, গতকাল সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে। এখানে ৭৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৮ জন করোনার জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ২১৯ জনের নমুনার মধ্যে ২১ জন করোনাক্রান্ত শনাক্ত হন। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ১৫৬ জনের নমুনায় ৪৫ জন ভাইরাসবাহক চিহ্নিত হন। ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১১৩ টি নমুনার মধ্যে ১০ টিতে করোনার অস্তিত্ব মিলে। নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএলে ২৬ জনের নমুনায় ১৬ জন করোনাক্রান্ত বলে শনাক্ত হন।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি শেভরনে ১১৩টি নমুনার মধ্যে ২৩ টি, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৭৫ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৯ টি এবং মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ২৬ টি নমুনায় ৬ টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এদিন চট্টগ্রামের ৮৫ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হলে পরীক্ষায় সবগুলোরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টার সংক্রমণ হার ছিল বিআইটিআইডি’তে ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ, চমেকে ৯ দশমিক ৫৯, চবি’তে ২৮ দশমিক ৮৫, সিভাসু’তে ৮ দশমিক ৮৫, আরটিআরএলে ৬১ দশমিক ৫৪, শেভরনে ২০ দশশিক ৩৫ শতাংশ, ইম্পেরিয়ালে ২৫ দশমিক ৩৩ এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ২৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।