বাসস দেশ-৩১ : ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লাভের মুখ দেখাচ্ছে ফেনীর আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার

488

বাসস দেশ-৩১
ফেনী- হাঁস প্রজনন খামার
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লাভের মুখ দেখাচ্ছে ফেনীর আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার
ফেনী, ২১ ডিসেম্বর ২০২০ (বাসস) : জেলার সোনাগাজী উপজেলায় আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার থেকে প্রতিবছর উৎপাদন হয় প্রায় একলাখ হাঁসের বাচ্চা।এতে ডিম উৎপাদন হয় দুইলাখেরও বেশি। উৎপাদিত এসব হাঁসের ছানা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এসব ছানাতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে একাধিক হাঁসের খামার।
এসব তথ্য জানিয়েছেন আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জাহিদ বিন রশিদ আল নাহিয়ান।
তিনি জানান, হাঁস এবং ডিম বিক্রি করে বহু নারী-পুরুষ নিজেদের আয়ের সক্ষমতা বাড়িয়েছেন। দেশের খাদ্যঘাটতি পূরণেও এ হাঁস প্রজনন খামারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে খামারটি নি¤œ আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও জানান, ১৯৯৪ সালে সোনাগাজী বাজারের পশ্চিম পাশে ১০ দশমিক ৫০ একর ভূমির ওপর হাঁস প্রজনন খামার প্রকল্প শুরু করা হয়। হাঁস পালনের জন্য নির্মাণ করা হয় নয়টি শেড, একটি দোতলা অফিস ভবন, একটি হ্যাচারি, একটি গোডাউন, একটি অফিসার্স কোয়ার্টার ও একটি ডরমেটরি।বর্তমানে খামারে উৎপাদিত বাচ্চা হাঁস বৃহত্তর সিলেট, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষুদ্র খামারিদের কাছে বিক্রি করা হয়।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা ২০ টাকা ও একসপ্তাহ বয়সের বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা রাখা হচ্ছে।এ খামারে উৎপাদিত হাঁসের জাতের মধ্যে রয়েছে চায়না পিকিং ও বেইজিং, খাকি ক্যাম্বল, ভারতীয় রানার, জিংডিং ও দেশি কালো হাঁস। এসব বাচ্চা কিনে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর অনেকেই হাঁস পালনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন।
তিনি আরও জানান, এ খামারে উৎপাদিত হাঁসগুলোর দৈহিক গঠন অন্য হাঁসের চেয়ে বেশ বড় হয়। এ হাঁসগুলো বছরের ১০ মাস ডিম দেয়। এ খামারে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা একলাখ ৮০ হাজার হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে দুইলাখ ৩৭ হাজার ডিম।
খামারের ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) জানান, এ খামারে ইতালি থেকে আনা ভিক্টোরিয়া ইনকিউবিটরের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে আটহাজার ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। খামারটি লাভজনক হওয়ায় সরকার প্রকল্পটিকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করেছে।
খামারটির পোল্ট্রি টেকনেশিয়ান শফিকুর রহমান জানান, প্রজননের মাধ্যমে এ খামারে হাঁসের উন্নত জাত উৎপাদন করা হয়। অন্য হাঁসের তুলনায় এ হাঁস ডিম বেশি দেয়, মাংসও বেশি হয়। তাই দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ এ হাঁস সংগ্রহ করার জন্য ভিড় জমায়। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সকালে এ খামার থেকে খাঁচা ভরে হাঁস ও ডিম সংগ্রহ করে ভ্যান গাড়ী ভরে ফেনী ও আশপাশের এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। প্রতি কেজিতে তারা ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত লাভ করে থাকেন। এতে করে দৈনিক তারা একহাজার টাকা থেকে দেড়হাজার টাকা পর্যন্ত আয় রোজগার করতে পারেন। এভাবেই অনেকে সাবলম্বী হয়েছেন।
সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের সমপুর গ্রামের খামারি আবুল কালাম জানান, এক সপ্তাহ বয়সী ছানা কেনার পর প্রায় দুইমাস লালন-পালন করা হয়। এরপর জোড়া প্রতি ৩৮০ টাকা থেকে চারশ’ টাকায় বিক্রি করা যায়।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব বলেন, আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। সেখানে হাঁসের প্রজনন ও ডিম উৎপাদন হচ্ছে। এখানে সামর্থ্য বাড়ানো গেলে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হবে।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/২০২০/এমকে