নোয়াখালীর হাতিয়ায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় আরো ২জনের মরদেহ উদ্ধার

593

নোয়াখালী, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস): জেলার হাতিয়ার মেঘনা নদীতে বর যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৭ জনের মধ্যে আরো এক নারী এবং এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আজ শনিবার ভোরে শিশু নিহা বেগমের (১) মরদেহ রামগতি উপজেলার টাংকির খাল সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে এবং জাকিয়া বেগমের (৫৫) মরদেহ ভোলা জেলার মনপুরার কলাতলী এলাকা থেকে কোস্টগার্ড স্টেশন হাতিয়া এবং স্টেশন রামগতি কর্তৃক চলমান সার্চ এন্ড রেসকিউ দল উদ্ধার করে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
এর আগে, ঘটনার পর লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার টাংকির ঘাট এলাকা থেকে নববধূ, ৩ নারী ও ৩ শিশু এবং শুক্রবার বিকেল ৩ টায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার টাংকির চর সংলগ্ন নদী থেকে হাতিয়া উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মো. কাদের এর ছেলে মোহাম্মদ হাছানসহ (৭) ৮ জনের লাশ এবং কয়েক জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত জাকিয়া বেগম উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী এবং পূর্ব আজিমপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে নিহা বেগম (১)।
এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৫ জন হলো, হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মো. কাদেরের মেয়ে নারগিস বেগম (৪), রুবেল হোসেনের মেয়ে হালিমা (৪), বয়ারচর গ্রামের ইলিয়াছ উদ্দিনের ছেলে আমির হোসেন (২), ভোলার মনপুরার কলাতলী গ্রামের মহিন উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া বেগম (৩) ও একই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আলিফ উদ্দিন (১)।
সার্চ এন্ড রেসকিউ দলের নেতৃত্বে থাকা হাতিয়া কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট এস এম তাহসিন রহমান বলেন, ওই দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ৫ শিশু নিখোঁজ রয়েছে এবং তাদেরকে উদ্ধারে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
নিহতরা হলো, উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের ইব্রাহিম সওদাগরের মেয়ে তাসলিমা বেগম (২১), নোয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে আফরিন আক্তার লামিয়া (২), একই গ্রামের আলমগীরের মেয়ে লিলি আক্তার (৮) ও আক্তার হোসেনের মেয়ে আছমা বেগম (১৯), হাতিয়ার কেরিংচর এর নাছিরপুর গ্রামের কালাদুর বাজার এর ফয়েজ উল্যাহ এর মেয়ে হোসনে আরা বেগম রুপা (৫), পূর্ব আজিম নগর গ্রামের আলা উদ্দিনের স্ত্রী রাহেনা বেগম (৩০), একই গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী নূরজাহান (৬৫), চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মো. কাদের এর ছেলে মোহাম্মদ হাছান (৭), উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া বেগম (৫৫) ও পূর্ব আজিমপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে নিহা বেগম (১)।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ট্রলার ডুবির পর নিখোঁজ ৭ জনের মধ্যে আজ ভোরে ১ নারী ও ১ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ঘটনার পরপর নববধূ, ৩ নারী ও ৩ শিশু এবং শুক্রবার বিকেল ৩ টায় ১ শিশুসহ ৮ জনের লাশ এবং কয়েক জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত ৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। তবে, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে ভোলার মনপুরা উপজেলার কলাতলী গ্রামের বেলাল মিস্ত্রীর ছেলে ফরিদ উদ্দিন বিয়ে করতে হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নে আসে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বর ও কনেসহ উভয় পক্ষের ৪০/৪৫জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারযোগে শান্তির বাজার ঘাট থেকে বরের বাড়ি ভোলা জেলার মনপুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথে মেঘনা নদীর টাংকিরখাল-ঘাসিয়ারচরের মাঝামাঝি এলাকায় তীব্র ¯্রাোতের কবলে পড়লে, তাদের ট্রলারটি উল্টে যায়। এসময় কয়েকজন সাঁতার কেটে ও মাছ ধরার নৌকার জেলেদের সহায়তায় তীরে উঠে আসে। পরে, স্থানীয়দের সহায়তায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন, পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ট্রলার ও নৌকার মাধ্যমে রাত পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে বরসহ কয়েক জনকে জীবিত এবং নববধূ, ৩ নারী ও ৩ শিশুসহ ৭ জনের লাশ উদ্ধার করে।