লন্ডন হাইকমিশনে ‘মুজিববর্ষ বিজয় দিবস’ উদযাপন

1389

ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন ‘মুজিববর্ষ বিজয় দিবস’ যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে।
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ উপলক্ষে বুধবার লন্ডন হাইকমিশনে আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট সংসদ সদস্য, যুক্তরাজ্য সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পদস্ত কর্মকর্তা এবং লন্ডনে নিযুক্ত ভারত ও ভূটানের রাষ্ট্রদূতসহ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এতে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহান শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম-এর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ বিষয়ক যুক্তরাজ্যের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ (এপিপিজি)-র সভাপতি ও ট্রেড এনভয় রুশানারা আলী, এমপি, এপিপিজি ও কনজার্ভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি বব ব্ল্যাকম্যান, এমপি, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার মিস গায়ত্রি ইশার কুমার, যুক্তরাজ্যে ভুটানের অনিবাসী রাষ্ট্রদূত তেনজিন আর ওয়াংচুক, ইউকে ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসের (ইউকেএফসিডিও)-’র দক্ষিণ এশিয়া ও আফগানিস্তান বিষয়ক পরিচালক গেরেথ বেইলি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত অক্সফামের বিশেষ প্রতিনিধি জুলিয়ান ফ্রান্সিস, ওবিই, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিনিধি সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এতে যোগ দিয়ে জাতির পিতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম জাতির পিতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ৭১-এর মহান শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং একাত্তরের বীর শহীদরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আত্মদান করে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক ন্যায় বিচার-এই চার মূল নীতির ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধানের সুরক্ষা করা। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য ও স্বপ্নদ্রষ্টা কন্যা প্রধানমনাত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার চার মূল নীতির আলোকেই কোভিড মহামারির চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছেন।’
হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সব ধরনের ধর্মীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে থাকার আহবান জানান।
ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী গভীর শ্রদ্ধায় জাতির পিতাকে স্মরণ করে বলেন, ‘আমি সাত বছর বয়সে বাবা-মা’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশে জন্মগ্রহনকারী একজন বাঙালি হিসেবে আমি গর্বিত। তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং কোভিডের মধ্যেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও পরিবেশ পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বব ব্ল্যাকম্যান এমপি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় তাঁকে লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের দেয়া উষ্ণ সম্বর্ধনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই সম্বর্ধনা ছিলো নব্য-স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি ব্রিটেনের সুস্পষ্ট সমর্থনের বহি:প্রকাশ। তিনি কোভিড মহামারীর চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের ৫.২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ‘অসামান্য’ ও তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতুলনীয় নেতৃত্বের বিশেষ সাফল্য বলে মন্তব্য করেন।
হাইকমিশনার গায়ত্রি ইশার কুমার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্ব ও নিবিড় বন্ধুত্ব এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় রচনা করেছে।
তিনি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জীর বিশেষ সহযোগী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘১৯৭১ সালের জুন মাসে শ্রী প্রণব মুখার্জী ভারতের রাজ্যসভায় মুজিব নগরে স্থাপিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং এর পরই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থন নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।’ হাইকমিশনার কুমার আরো বলেন, ‘ভারতের জনগণ আজ আরো শক্তিশালী, প্রগতিশীল ও শান্তিপূর্ণ এক বাংলাদেশ দেখতে চায়, যা হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সত্যিকারের প্রতিফলন।’ যুক্তরাজ্যে ভুটানের অনিবাসী রাষ্ট্রদূত তেনজিন আর ওয়াংচুক ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূটানের তৃতীয় রাজা জিগমে ডর্জি ওয়াংচুকের কোলকাতায় বাংলাদেশিদের একটি আশ্রয় শিবির পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজা ওয়াং চুক তখন ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের মানবিক সহযোগিতার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন এবং তাঁরই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভূটান বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের একটি আলোকচিত্রের কথা উল্লেখ করে গেরেথ বেইলী বলেন, ‘এ ছবি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দলিল, যে সম্পকের্র সুবর্ণ জয়ন্তী আগামী বছর আমরা পালন করবো।’
জুলিয়ান ফ্রান্সিস ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির ওপর হানাদার বাহিনীর নৃসংশ হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেন, হানাদার বাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যই বাংলাদেশের মানুষ সেদিন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। যেখানে তিনি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভারতে আশ্রিত বাঙালিদের মানবিক সহযোগিতার জন্য কাজ করেছেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের পর মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয় দিবসকে উৎসর্গ করে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
এর আগে সকালে হাই কমিশন প্রাঙ্গণে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর জাতির পিতার ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের মহান আত্মার শান্তি এবং বাংলাদেশের অব্যাহত সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করাহয়।