কোভিড-১৯ মোকাবেলায় পানি নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে : এডিবি

404

ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের লক্ষ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে পানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে তাদের এজেন্ডার শীর্ষে রাখতে হবে।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২০ শীর্ষক রিপোর্টে এ অঞ্চলের পানি নিরাপত্তার অবস্থা বিশেষ করে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পানি সরবরাহ, সবার জন্য স্যানিটেশন, উন্নত জীবিকা এবং স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্রের প্রাপ্যতার পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ ও বন্যা হ্রাসের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পানি নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা আরো জরুরি কারণ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যসুরক্ষার প্রথম বলয় তৈরি করে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক মানুষের এখনও পর্যন্ত এসব গুরুত্বপূর্ণ সেবা লাভের সুযোগ সীমিত। নতুন এডব্লিউডিও সংস্করণটি এডিবি’র উন্নয়নশীল সদস্যদের জন্য পানি নিরাপত্তার বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সুস্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য সমাধান দিচ্ছে।
গত কয়েক দশকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অর্জন সত্ত্বেও গ্রামাঞ্চলে দেড়শ’ কোটি মানুষ এবং শহরাঞ্চলে ৬০ কোটি মানুষের এখনো পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। এডিবি’র ৪৯টি আঞ্চলিক সদস্যের মধ্যে ২৭টি সদস্য দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুতর পানির ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং ১৮টি সদস্য দেশ এখনো পানি সংক্রান্ত দুর্যোগ থেকে তাদের বাসিন্দাদের যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারেনা।
প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) অংশীদারিত্বে পানি খাতের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এসব দেশে প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) অর্জনের জন্য পানি, স্যানিটেশন ও অন্যান্য পানি-সংক্রান্ত অবকাঠামো ও সেবার ক্ষেত্রে সকল সরকারী, বেসরকারী বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন বৃদ্ধি করা জরুরি।
সুশাসন কার্যকর ও বজায় রাখার জন্যও অর্থায়ন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে পানি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যথেষ্ঠ সামর্থ ও আর্থিক সম্পদের প্রয়োজন হবে যাতে তারা প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন, অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয় এবং স্বচ্ছ উপায়ে প্রয়োজনে অংশিজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারে।
প্রতিবেদনের মূল সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিতে পানি সাশ্রয়ী সেচ, গোষ্ঠী ভিত্তিক পানি ও স্যানিটেশন সেবা প্রদান, এবং স্থানীয়ভাবে সহনশীল দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থা গ্রহন করা।
এছাড়াও, লিঙ্গ ভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কেবল শহরগুলোতে নয় বরং বস্তি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য পানি, স্যানিটেশন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস অবকাঠামো পরিষেবাগুলোতে বিনিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ব্যাপকভাবে দূষণ হ্রাস, বৃত্তাকার অর্থনীতিতে উদ্দীপনা, ভূমি সুরক্ষা জোরদার এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পানি সংক্রান্ত বিপর্যয় এড়াতে পানি ব্যবস্থার সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুু ও অন্যান্য বৈশ্বিক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই অঞ্চলের পানি নিরাপত্তা উন্নয়নে এডিবি ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং বর্জ্য পানি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে এবং একই সময় বন্যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি প্রদান করেছে।
চরম দারিদ্র্য বিমোচনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে এডিবি একটি সমৃদ্ধ, সহনশীল ও টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।