বাসস দেশ-৭ : ভোলায় ব্ল্যাক বেবী তরমুজ চাষের সম্ভাবনা

156

বাসস দেশ-৭
ভোলা-বেবী-তরমুজ
ভোলায় ব্ল্যাক বেবী তরমুজ চাষের সম্ভাবনা
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জেলায় ব্ল্যাক বেবী তরমুজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত বছর মাত্র ৪ শতাংশ জমিতে এ তরমুজের চাষ হলেও এবছর হয়েছে ৬ একর জমিতে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এর চাষ করে সফল হওয়াতে এবছর ৬০ জন কৃষকের মাঝে বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। আগামী বছর এ তরমুজ চাষ আরো সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। মূলত গ্রীস্মমকালীন এ ব্ল্যাক বেবী তরমুজ স্থানীয়ভাবে বিপুল সাড়া ফেলেছে। কৃষকদেরও দিন দিন এর ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে।
সংস্থাটির সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ আনিসুর রহমান টিপু বাসস’কে জানান, মূলত ব্ল্যাক বেবী তরমুজ চাষের জন্য উঁচু জমি প্রয়োজন। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর চারা রোপণ করা যায়। দুই মাসের মধ্যে গাছে ফলন চলে আসে। যেখানে সাধারণ তরমুজের ফলন আসতে সময় নেয় ১১০ থেকে ১২০ দিন। এবছর সদর উপজেলা, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাসন ও মনপুরায় ভালো চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন। তারা আশা করছেন নির্ধারিত জমি থেকে প্রায় ৪০ হাজার কেজি তরমুজ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য পাওয়া যাবে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ টাকা।
সরেজমিনে ভোলা সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীত গ্রীষ্ম বর্ষার তারতম্য না থাকায় গতানুগতিক ফসলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে অনেক কৃষক। গতবছর ভোলায় প্রথমবারের মতো অসময়ে ব্ল্যাক বেবী তরমুজ চাষ করে সফলতা পান দৌলতখান উপজেলার চরপাতা গ্রামের বেকার যুবক সৌরভ হাওলাদার। কম খরচে বেশি ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকায় তার দেখাদেখি বেবী তরমুজ চাষে অন্যরাও আগ্রহী হতে শুরু করে।
এবছর পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে বীজ, প্রশিক্ষণসহ নানা উপকরণ নিয়ে জেলার ৬০জন চাষি ছয় একর জমিতে মাচা পদ্ধতিতে ব্ল্যাক বেবী তরমুজ আবাদ করেন।দেশি তরমুজ চাষের অর্ধেক খরচ বেবী তরমুজে । এছাড়া ফসল নষ্ট হবার কোনো আশংকা না থাকায় কৃষকের মাচায় সারি সারি তরমুজ ফলন হয়। আর ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। দুই মাসেই এ তরমুজ বিক্রির করতে শুরু করেন তারা। বাজারে ভালো দামও পান এসব তরমুজের। দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় মানুষ ক্ষেত থেকেই এ তরমুজ কিনে নিতে শুরু করে। পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকরাও ব্যøাক বেবী তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচরা গ্রামের ব্ল্যাক বেবী জাতের তরমুজ চাষি স্বজল ভাওয়াল ও চান মিয়া বলেন, এমন তরমুজ আমরা কখনো দেখিনি। গ্রামীণ জন উন্নয়ণ সংস্থা থেকে আমারা বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ১০ শতাংশ জমিতে ব্ল্যাক বেবীর চাষ করি। লাভও হয় ভালোই। ১০ শতাংশ জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে এবছর ৩৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেন তারা।
অপরদিকে একই উপজেলার রাম কেশব গ্রামের কৃষক মিথিল চৌধুরী ব্ল্যাক বেবী জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতানুগতিক ফসল চাষে তাদের ক্ষতির সন্মুখীন হতে হয়েছে। তাই, এবছর ৮ শতাংশ জমিতে ব্ল্যাক বেবী তরমুজ চাষ করেন তিনি। ফলনও ভালো হয়েছে। ৮ শতাংশ জমিতে ১২ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেন। তাদের দেখাদেখি এলাকার কৃষক ছিদ্দিক বেপারী, জাকির হোসেন ও শহিদুল বেপারীসহ অনেকেই সামনের বছর এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন জানান, ভোলায় একসময় ব্লাক বেবী তরমুজ চাষ হতো না। ২০১৯ এবং ২০২০ পর পর দুই বছর বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করেছে তারা। চলতি বছর কৃষকরা ব্লাক বেবী তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। এছাড়া বাজারে বিক্রি করেও ভালো দাম পায়।
বাসস/এইচ এ এম/এনডি/সংবাদদাতা/১৩৩৮/নূসী