বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : সরকারি প্রকল্প ‘স্বপ্ন’র ছোঁয়ায় আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে গ্রামীণ অসহায় নারী

207

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
স্বপ্ন-নারী
সরকারি প্রকল্প ‘স্বপ্ন’র ছোঁয়ায় আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে গ্রামীণ অসহায় নারী
ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের আলেয়া বেগম। হঠাৎ করেই আলেয়া বেগমের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। দেখেন জীবনের সবচেয়ে কালো দিক, যখন তার স্বামী তালাক দিয়ে ফেলে চলে যায়। আলোয়া বেগমের কোলে তখন মাত্র ছয় মাসের সন্তান। তালাকের পর তার র্ঠিকানা হয় বাবার ঘরে। সেখানে এক ছোট অন্ধকার রুমে ঠাঁই হয় মা আর সন্তানের।
আলেয়া বলেন, তখন আমার জীবনে খুব দু:সময়। আমার কোন শিক্ষা ছিলনা। ছিলনা কোন অর্থ যা দিয়ে আমি আমার মা-বাবা আর সন্তানকে সহযোগিতা করতে পারি। কিন্তু আমি এই দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠেছি। আর তা সম্ভব হয়েছে সরকারের ‘উৎপাদনশীল সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ উন্নয়ন (স্বপ্ন)’ প্রকল্পের কারনে।
স্বামীর কাছ থেকে কালাকের পর এক সময় সময় আলেয়া গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার নিজের বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন্য তাকে কাজ ফেলে মাঝে মাঝে বাড়ি ফিরে আসতে হত। তাই অনেকেই তাকে কাজে রাখার বিষয়ে আগ্রহী ছিলনা।
তিনি বলেন, সে সময় আমার দিনগুলো কাটছিল চরম অনিশ্চয়তায়। আমি এবং আমার সন্তানের কোন ভবিষ্যত দেখছিলাম না। যাই হোক একসময় আমি আলোর দেখা পাই। এক দুপুর বেলা আমি কাজ করছিলাম। সে সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে মাইকে এক ঘোষণা শুনতে পাই। সেখানে বলছিল ‘স্বপ্নের’ পক্ষ হতে গরীব নারীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবং সৌভাগ্যবশত লটারীর মাধ্যমে আমি ‘স্বপ্ন’ প্রকল্পে একজন বেনিফিশিয়ারী হিসেবে ভর্তি হই।
মূলত এরপর থেকে আলেয়ার ভাগ্য ফিরতে থাকে এবং কাজের মাধ্যমে তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রতিদিন আয় হওয়া শুরু করে। এ সময় তিনি তার দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ পান। প্রশিক্ষণ নেন ব্যবস্থাপনা, কৃষি এবং গবাদি-পশু পালনের উপর। ‘স্বপ্নের’ আট-নয় জনের একেকটি গ্রুপ করা হয়। তেমন এক গ্রুপের সদস্য হয় আলেয়া। তারা সবাই মিলে ‘রোটেটিং সেভিংস এন্ড ক্রেডিট এসোসিয়েশনে’ টাকা জমান।
নিজের কর্মদক্ষতা এবং এসোসিয়েশনে গ্রুপের সদস্যদের জমানো অর্থ দিয়ে আলেয়া একটি খাবারের দোকান খোলেন। এসময় তার মূলধন ছিল ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা। স্থানীয়রা তার খাবার পছন্দ করেন। কয়েক মাসের মধ্যে তার দোকানের মূলধন দাঁড়ায় ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা।
তিনি সকালে ‘স্বপ্ন’তে কাজ করতেন এবং বিকেলে তার নিজের দোকান চালাতেন। আঠার মাস পর যখন তার কাজের চুক্তি শেষ হয় তখন তার জমানো অর্থের পরিমান দাঁড়ায় ২২,৫০০ (বাইশ হাজার পাঁচশ) টাকা। এই টাকাসহ স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন, যাতে করে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো যায়।
আজ আলেয়া একটি রেস্টুরেন্ট চালায় যেখানে খুব সুস্বাদু খাবার রান্না হয় তারই তত্ত্ববধানে। মাত্র দেড় বছরে তার ব্যবসা ভালো সুনাম কুড়ায় এবং তার মূলধনের পরিমান দাঁড়ায় চার লাখ টাকা।
তিনি বলেন, এখন আমি ভালোভাবে চলছি। আমার ছেলেও ভালো স্কুলে পড়ছে।
আলেয়ার মত সাতক্ষীরা এবং কুড়িগ্রাম জেলার ৮,৯২৮ জন গরীব নারীকে এই ‘স্বপ্ন’ প্রকল্পের আওতায় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই দুটি জেলায় ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর, সরকার ‘স্বপ্নের’ কার্যক্রম লালমনিরহাট, গাইবন্ধা এবং জামালপুর জেলায় শুরু করে।
‘স্বপ্ন’ এর জাতীয় প্রকল্প পরিচালক কাজল চ্যাটার্জী বলেন, স্বপ্ন হচ্ছে একটি সামাজিক স্থানান্তর ভিত্তিক গ্র্যাজুয়েশন মডেল প্রকল্প যা অতি দরিদ্র গ্রামীণ নারী প্রধানত তালাকপ্রাপ্ত, বিধাব, স্বামী পরিত্যক্তা অথবা প্রতিবন্ধী স্বামীর স্ত্রীদের জন্য।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৮-মাস নির্দিষ্ট চুক্তিভিত্তিক পাবলিক ওয়ার্কস, জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ এবং তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত করা।’
চ্যাটার্জি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে এই প্রকল্পটি এপ্রিল ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত চলমান। এতে সহযোগতা করছে ইউএনডিপি, মারিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং বিএসআরএম।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/আহো/০৯৩০/স্বব