বাসস দেশ-৩৩ : বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে সমুদ্র-সম্পদের অনুসন্ধান ও সদ্ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : রাবাব ফাতিমা

103

বাসস দেশ-৩৩
বাংলাদেশ-ইউএন-সমুদ্র
বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে সমুদ্র-সম্পদের অনুসন্ধান ও সদ্ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : রাবাব ফাতিমা
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশনের বিধি-বিধান এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও প্যারিস চুক্তি সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের সমন্বিত, সময়োপযোগী ও কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে সমুদ্র-সম্পদের অনুসন্ধান ও সদ্ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
গতকাল ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩৮তম প্লেনারি সভায় ‘সমুদ্র আইন’ বিষয়ক এক আলোচনায় তিনি এ আহ্বান জানান। আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় একথা জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে বর্ধিত মহীসোপানে বাংলাদেশের সীমা নির্ধারিত হলে বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ অন্বেষণ করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ, যা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের মহীসোপন সীমা বিষয়ক কমিশনে বঙ্গোপসাগরে বর্ধিত মহীসোপানে বাংলাদেশের সীমা সংক্রান্ত সংশোধিত তথ্যাদি প্রদানের বিষয়টির উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আশা প্রকাশ করেন, বর্ধিত মহীসোপানের নতুন সীমা ‘সুনীল অর্থনীতি’র সম্ভাবনাগুলোকে ঘরে তুলতে নতুন সুযোগ এনে দিবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে পেরেছে এবং এ সংক্রান্ত সংশোধিত তথ্যাদি জাতিসংঘে জমা দিয়েছে।
সমুদ্র বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো বিশেষ করে সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ক্রমাগত সমুদ্র-স্তরের উত্থান সুপেয় পানি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য ও জীবিকা সম্পর্কিত বিদ্যমান দূরাবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এজেন্ডা ২০২০ এর সমায়ানুগ ও কার্যকর বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যেহেতু সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মনুষ্য সৃষ্ট কর্মকান্ডই প্রধানত দায়ী, তাই এর সমাধানও মানুষকেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো নাজুক পরিস্থিতির শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি। এই নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত ২০০৯ সালের ‘জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা’সহ বিভিন্নমূখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। দেশের সমুদ্র-সম্পদের দক্ষ ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেরিটাইম জোন আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
সমূদ্র এবং এর বিশাল সম্পদকে বিশ্বজনীন সম্পদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা সমুদ্র সম্পদের ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর ব্যবহার, সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ, সমুদ্র-পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষাসহ জাতীয় সমুদ্রসীমার বাইরে সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারকল্পে আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক আইনী দলিল প্রণয়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেন।
উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি মোকাবিলায় আইন ও নীতিগত কাঠামোর বাস্তবায়নার্থে সক্ষমতা বিনির্মাণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং অনিয়মিত অভিবাসনে সমুদ্রপথের অপব্যবহারসহ সমুদ্র সুরক্ষায় অব্যাহত হুমকি মোকাবিলার বিষয়ে জোর দেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। চলমান কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে সমুদ্র সম্পদের উপর নির্ভরশীল মানুষ বিশেষত উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকূলীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পেশাজীবিদের জীবিকা ও কর্মসংস্থান সঙ্কটের বিষয়টি উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সম্মিলিত সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির উপর গুরুত্বরোপ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা, যাতে তারা এ পরিস্থিতি থেকে আরও ভালো পর্যায়ে উত্তরিত হতে পারে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এসভায় সামুদ্রিক মৎস্য এবং সমুদ্র আইন বিষয়ক দুটি রেজুলেশন গ্রহণ করে। বাংলাদেশ উভয় রেজুলেশনে সমর্থন জানায়।
বাসস/সবি/এমএন/১৯০৯/-শআ