লিপজিগের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিল ইউনাইটেড

428

লিপজিগ, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : সহজ সমীকরনে খেলতে নেমেও শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। শেষ ১৬’র আশা টিকিয়ে রাখতে হলে ইউনাইটেডকে গ্রুপের শেষ ম্যাচে আরবি লিপজিগের বিপক্ষে অন্তত এক পয়েন্ট পেলেই হতো। কিন্তু ইন-ফর্ম লিপজিগের বিপক্ষে ৩-২ গোলে পরাজিত হয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় ঘটেছে রেড ডেভিলসদের।
রেড বুল এরিনাতে ম্যাচের শুরুতে দুই গোল হজম করে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ওলে গানার সুলশারের দল। ৬৯ মিনিটের মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ধারে খেলতে আসা এ্যাঞ্জেলিনো, আমাডু হাইডারা ও জাস্টিন ক্লুইভার্টের গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। শেষ ১০ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেসের পেনাল্টি ও বদলী খেলোয়াড় পল পগবার গোলে দুই গোল পরিশোধ করলে হার এড়ানোর জন্য তা যথেষ্ঠ ছিলনা।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার ওলে গানার সুলশার বলেছেন, ‘তাদের দ্বিতীয় গোলের আগ পর্যন্ত আমরা কোন প্রতিরোধই গড়তে পারিনি। আমরা তাদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানতাম। শুরুতেই দুই গোল হজম করে তার থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারিনি।’
অথচ অক্টোবরে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম ম্যাচে জার্মান ক্লাবটিতে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ইউনাইটেড। উচ্ছসিত লিপজিগ কোচ জুলিয়ান নেগলেসমান বলেছেন, ‘ছেলেরা দারুন লড়াই করেছে।’
ম্যাচ শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে এ্যাঞ্জেলিনোর দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লিপজিগ। স্প্যানিশ এই ফুলব্যাক বলেছেন, ‘এই অনুভূতি দারুন। শেষ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচটি কঠিন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিনটি আমাদের হয়েছে। এই ম্যাচে জয়ী হতে পেরে আমি দারুন খুশী।’
সপ্তাহের শেষে প্রিমিয়ার লিগে ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ের ম্যাচটি থেকে পাঁচটি পরিবর্তন করে দল সাজিয়েছিলেন সুলশার। এর মধ্যে লেফট-ব্যাক লুক শ দলে ফিরেছিলেন। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কাটিয়ে এই ডিফেন্ডার ইউনাইটেডের হয়ে ১৫০তম ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেঠিলেন। বদলী বেঞ্চে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেছিলেন পগবা। যদিও তার এজেন্ট জানিয়েছেন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না এই ফরাসি মিডফিল্ডার। কিন্তু ম্যাচের শেষের দিকে তার হেড কিছুটা হলেও ইউনাইটেডকে আশাবাদী করে তুলেছিল।
মার্সেল স্যাবিটাইজারের ক্রস থেকে লেফট-ব্যাক এ্যাঞ্জেলিনো বাম পায়ের জোড়ালো শটে ডেভিড ডি গিয়াকে পরাস্ত করলে এগিয়ে যায় লিপজিগ। ইউনাইটেড গোলরক্ষক ১৩ মিনিটে আবারো গোল হজম করে দলকে বিপদে ফেলেন। হাইডারার গোলে ব্যবধান দ্বিগুন হয় স্বাগতিকদের। প্রথমার্ধেই ব্যবধান ৩-০ হতে পারতো। কিন্তু পোস্টের খুব কাছে থেকে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন এমিল ফোর্সবার্গ। প্রথমার্ধে ম্যাসন গ্রীনউডের হেড ও মার্কোস রাশফোর্ডের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও সমতায় ফেরা হয়নি ইউনাইটেডের। ইব্রাহিমা কোনাটের হেড পোস্টে লাগলে ও উইলি ওরবানের গোল অফসাইডের কারনে ভিএআর বাতিল করে দিলে কিছুটা হলেও হতাশ হতে হয় লিপজিগকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ইউনাইটেড তাদের রক্ষনভাগ শক্তিশালী করার চেষ্টা করে। লেফট উইঙ্গার এ্যালেক্স টেলেসের স্থানে খেলতে নামেন ডনি ফন ডি বিক, ৬১ মিনিটে নেমাঞ্জা মাটিচের স্থানে মাঠে নামেন পগবা। ফার্নান্দেসের একটি শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়, আরেকটি পোস্টে লেগে ফেরত আসে। লিপজিগ কোচ জুলিয়ান নেগলেসমান ইউসুফ পোলসেন ও ক্লুইভার্টকে মাঠে নামিয়ে আক্রমনভাগ জোড়ালো করেন। ৬৯ মিনিটে সাবিটাইজারের ক্রসে লিপজিগের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন ক্লুইভার্ট। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি ছিল। ডি বক্সের ভিতর গ্রীনউডকে ফাউল করে বসে কোনাটে। ফলে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে ৮০ মিনিটে ফার্নান্দেস ইউনাইটেডের হয়ে এক গোল পরিশোধ করেন। ফার্নান্দেসের কর্ণার থেকে পগবার হেড কোনাটের সাথে ডিফ্লেকটেড হয়ে জালে জড়ালে ৮২ মিনিটে নিজেদের দ্বিতীয় গোল পায় ইউনাইটেড। কিন্তু ম্যাচ শেষের বাকি আট মিনিট আর ফিরে আসতে পারেনি ইউনাইটেড।
ছয় ম্যাচে পিএসজির সমান ৯ পয়েন্ট নিয়ে হেড-টু-হেডে পিছিয়ে পড়ে বিদায় ঘটেছে ইউনাইটেডের। পিএসজির হাতে এখনো একটি ম্যাচ বাকি রয়েছে। ১২ পয়েন্ট নিয়ে এইচ-গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে শেষ ১৬’তে পৌঁছে গেছে লিপজিগ।