ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীর উত্তমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

128

ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : কিলো ফ্লাইটের বৈমানিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীর উত্তম আর নেই। তিনি সোমবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে… রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
তিনি স্ত্রী, কন্যা ও আত্মীয়স্বজনসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমের জানাজার নামাজ মঙ্গলবার দেড়টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার-এর প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তার বিদেহী আত্মাকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি ফ্লাই পাস্টের আয়োজন করে।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর পক্ষে অতিরিক্ত সচিব এম ইদ্রিস সিদ্দিকী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান, ভারতীয় হাইকমিশনের ডিফেন্স এ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেএস চিমা মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
নামাজে জানাজায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত শরীক হন। এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের ডিফেন্স এ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেএস চিমা সহ উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা, সকল পদবীর সদস্যবৃন্দ এবং মরহুমের আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ডিমাপুরে তিনটি বিমান নিয়ে গঠিত কিলো ফ্লাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। ১০ জন কর্মকর্তা ও ৪৭ জন বিমানসেনার সমন্বয়ে গঠিত কিলো ফ্লাইট এর ৫০টি সফল অপারেশন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল।
ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ, বীর উত্তম ছিলেন এই কিলো ফ্লাইটের একজন গর্বিত সদস্য। ১৯৪৬ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ, বীর উত্তম কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে বৈমানিক হিসেবে যোগদান করেন। ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারত গমন করেন। পরবর্তীতে তিনি কিলো ফ্লাইটে যোগদান করেন এবং যুদ্ধবিমানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি কিলো ফ্লাইটের অটার বিমানের বৈমানিক হিসেবে চট্টগ্রামের গুপ্তখালের তেলের ডিপোসহ বিভিন্ন দুঃসাহসিক ও গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। কিলো ফ্লাইটের বৈমানিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ কে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
১৯৭২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে এবং ২০০৬ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, সদর দপ্তর কুর্মিটোলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন।
তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা বাংলাদেশ একজন অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিমান বাহিনী গঠনে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ রাখা একজন নির্ভিক বৈমানিককে হারিয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে।