বাসস বিদেশ-৭ : প্যারিস চুক্তির পর থেকে জলবায়ু বিপর্যয় বেড়েছে

156

বাসস বিদেশ-৭
পরিস্থিতি-জলবায়ু-জাতিসংঘ সম্মেণ
প্যারিস চুক্তির পর থেকে জলবায়ু বিপর্যয় বেড়েছে
প্যারিস, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস ডেস্ক) : ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পর থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব বেড়ে গেছে। অ্যান্টার্কটিক হিটওয়েভ, হিমবাহ গলে যাওয়া, একের পর এক খরা ও দাবানলের ধাক্কা এবং বড় মাপের ঝড়-ঝাপটার প্রকোপে বিষয়টি আরো দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। খবর এএফপি’র।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন কেন্দ্রের (আইসিসিএসিএডি) সলিমুল হক জানান, প্যারিস চুক্তির পর থেকে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন,”আমরা এখন মানব সৃষ্ট জলবাযূ পরিবর্তনের প্রভাবগুলি দেখছি।”
রেকর্ডকৃত পাঁচটি উষ্ণতম বছরগুলোর সবই ২০১৫ সালের পরের এসেছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ২০২০ সালকে ইতিহাসের তিনটি উষ্ণতম বছরের একটি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ রেকর্ড-বিপর্যয়কর উষ্ণতা প্রবাহের কবলে পড়েছিল।
গত জুনে সাইবেরিয়ার ভার্খোয়ান্স্ক শহরে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ফেব্রুয়ারিতে গবেষকরা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় ২০ দশমিক ৭৫ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা রেকর্ড করে। উভয় রেকডের্র অবস্থানই শীর্ষে।
উচ্চ এবং উষ্ণতর সমুদ্রের ক্রান্তীয় ঝড়ও ক্রমান্বয়ে বেড়ে গেছে। গত বছর উপকূলীয় মোজাম্বিক ও দ্বিতীয় শহর বেইরায় দুটি ঘূর্ণিঝড়ে বেশিরভাগ অঞ্চল বিধ্বস্ত হয়। এ দু’টি ঝড়ে ৬০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারা। ২০১৭ সালে, দক্ষিণ এশিয়ায় এবং বিশেষত বাংলাদেশের বেশিরভাগ অংশ সুপারচার্জড ঝড় মৌসুমে বন্যার জলাবদ্ধতায় ডুবে যায়।
এদিকে আবহাওয়া বৈচিত্র্যে তাপমাত্রার উর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকায় খরা বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডাব্লিউডাব্লিউএ) সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার মহানগরে “ডে জিরো” অর্থাৎ শহরের বেশিরভাগ ট্যাপগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো হুমকি পরিস্থিতি তিনগুণ বেড়ে যাবে।
এ বছর পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া এবং সাইবেরিয়ার বশিরভাগ অঞ্চলে দীর্ঘ এবং ব্যাপক খরায় পরিস্থিতি দাবানলের সৃষ্টি করে। যা ফসলের ফলন, পাশাপাশি পানীয় জলের সরবরাহের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ২০১৭ সালে তিন বছরের রেকর্ড খরার পরে কেপটাউনের প্রায় চার মিলিয়ন বাসিন্দার কলগুলি প্রায় শুকিয়ে যেতে দেখা যায়। এ জাতীয় তাপমাত্রার অস্বাভাবিকতা আমাদের এই গ্রহের মেরুগুলির ওপর অস্বাভাবিকভাবে প্রভাব ফেলছে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের বরফ অভূতপূর্বভাবে গলে যাচ্ছে।গত শতাব্দীতে হিমবাহ থেকে গলে যাওয়া বরফ বিশে^ সমুদ্রের স্তর ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি করে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে ২০৫০ সালের মধ্যেই সমুদ্র বেড়ে ওঠায় প্রায় এক বিলিয়ন মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির শিকার হতে পারে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কৃষিকাজকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ এবং এর ক্রমবর্ধমান তীব্রতার ফলে বিশে^র ‘ফুড চেইন’ হুমকির মুখে পড়েছে।
গত বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সতর্ক করেছিল যে জলবাযু পরিবর্তন ফলে খাদ্য উৎপাদনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এতে করে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও খাদ্যের একটি বড় উৎস মাছের মজুদ হ্রাস পেতে পারে।
বাসস/ অনু- জেজেড/২০০৮/কেএমকে