বাসস দেশ-৪ : ৭১ এর এদিনে ভোলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে

144

বাসস দেশ-৪
ভোলা-মুক্তিযুদ্ধা-নিয়ন্ত্রণ
৭১ এর এদিনে ভোলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকেই ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর একদিন আগে ভারতীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ছিলো অদম্য। তারা (মুক্তিযোদ্ধারা) নিশ্চিত যে বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ডে (ওয়াবদা) অবস্থানরত পাকবাহিনী অনেকটাই নজরবন্দী হয়ে পড়ে। ওয়াবদার চারপাশে অবস্থান নেয় মুক্তিবাহিনীর দামাল ছেলেরা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি এম. হাবিবুর রহমান আজ বাসস’কে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ভারত আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দের সীমা থাকেনা। আমাদের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ৭ তারিখ হাই কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ও আলী আকবর (বড় ভাই) এর নেতৃত্বে তিনি হাবিবুর রহমান, মো: ছাদেক, আব্দুল মমিন টুলু (বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান), নানু ভাই, শষি, মো: সাইফুল্লাহ, মো: ছালেহ আহমেদ, গাজী জয়নাল আবেদিন, মো: দোস্ত মাহমুদ, শফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে মিলে ওয়াবদার চারিদিকে অবস্থান নেন। কিন্তু ওয়াবদার মধ্যে থাকা পাকবাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকায় সরাসরি আক্রমণ করেনি মুক্তিযোদ্ধারা। তবে পরিকল্পনা চলছিলো কিভাবে তাদের উপর হামলা করা যায়।
তিনি জানান, পরে ১০ ডিসেম্বর রাতে ওয়াবদা ঘেরাও এর পরিকল্পনা নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু তারা পরাজয় জেনে আগেই সটকে পড়ে সেখান থেকে। ১০ তারিখ সকালে তারা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে খোলা ট্রাকে করে লঞ্চ ঘাটে যায়। সেখান থেকে শান্তিবাহিনীর সেক্রেটারি ইলিয়াস মাস্টারের কার্গো লঞ্চযোগে পালাবার চেষ্টা করে।
রণাঙ্গণের এ বীর যোদ্ধা আরো জানান, কিন্তু ততক্ষণে তাদের পালিয়ে যাবার খবর পেয়ে ভোলার খালে আমরা প্রতিহতের চেষ্টা করি। এসময় পাকবাহিনী স্টেনগানের গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। এসময় তারা তাদের দোসরদের (রাজাকার) নিয়ে যায়। কিন্তু পথিমধ্যে চাঁদপুরের কাছে গেলে মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় কার্গোটি বিধ্বস্ত হয়। মারা পরে পাকসেনারা।
এ ব্যাপারে সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর মো: দোস্ত মাহমুদ বাসস’কে বলেন, ৭ ডিসেম্বর আমরা সদরের শীবপুর, আলীনগর, রতনপুরসহ ওয়াবদার চারপাশে ভাগে ভাগে অবস্থান গ্রহণ করি। এর আগে মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতখান থানা, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যসন, তজুমদ্দিন, মনপুরা থানা দখল করে নেয়। সেসব এলাকায় মুক্তিবাহিনীর ছোট ছোট দল অবস্থান নেন।
দোস্ত মাহমুদ বলেন, বলা যায় ৭ ডিসেম্বর ভোলা এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ’র মধ্যে চলে আসে আমাদের। যার ফলশ্রুতিতে চ’ড়ান্তÍ বিজয় আসে আমাদের। পাকসেনাদের পালাবার খবরে হাজার হাজার জনতা রাজপথে নেমে আসে সেদিন বিজয় উল্লাসে। এক অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেদিন। যা ভাষায় ব্যক্ত করা যায়না।
বাসস/এনডি/এইচ এ এম/সংবাদদাতা/১২০৩/নূসী