পিরোজপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ৫ জেলায় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে

295

পিরোজপুর, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ৫ জেলা গোপালগঞ্জ- খুলনা- বাগেরহাট- সাতক্ষীরা- পিরোজপুরকে নিয়ে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্নমূখী কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এ ৫ জেলার ৩৯টি উপজেলায় ফসলের নিবীড়তা ৫-৮ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে।
জানা গেছে, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে উপকূলীয় এলাকার লবনাক্ততার কারণে আবাদি জমিতে সীমিত আকারে ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। গোপালগঞ্জ- খুলনা- বাগেরহাট- সাতক্ষীরা- পিরোজপুর জেলার পরিবেশগত বৈশিষ্টের কারণে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি, জলোচ্ছাস এবং ঘূর্ণিঝড় বার-বার আঘাত আনে। এছাড়া এ অঞ্চল সমূহে শুষ্ক মৌসুমে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় ও লবনাক্ততা বৃদ্ধি পায়। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এ সব জেলায় কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ সুবিধা সমূহ ব্যবহারের পরিমাণ কম, ফলে কৃষির কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষক ধানভিত্তিক শস্য উৎপাদনের প্রতি বেশী মনোযোগী হওয়ায়, ভূমিক্ষয় ত্বরান্বিত হচ্ছে। পানি সম্পদের ঘাটতি তৈরী হচ্ছে। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা ও উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং এর ফলে পুষ্টি ও খাদ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসকল সমস্যা সমাধানে এ অঞ্চলে চাষাবাদের যোগ্য সকল জমি চাষের আওতায় আনা, পানি সম্পদের কার্যকরী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে বসত বাড়িতে সবজি এবং উদ্যানতাত্বিক ফসল চাষ সম্প্রসারণ এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে এ কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়। এ প্রকল্পটির পরিচালক আলমগীর বিশ^াস জানান, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। ফরিদপুর- খুলনা- বরিশাল এর ৫ জেলার ৩৯টি উপজেলার ২৭ হাজার ৮শত ৮৫টি কৃষক পরিবার প্রদর্শনীর মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবে এবং ২৯ হাজার ৫২০ জন কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হবে। এছাড়া মাঠ দিবস, কৃষি মেলা, উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ ও আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রায় ২ লক্ষ কৃষক পরিবার উপকারের আওতায় আসবে। এ প্রকল্পটির ডিপিডি তৌহিদুদ্দিন জানিয়েছেন, ৩৮ হাজার কৃষককে সার, সুপারিশ কার্ড প্রদান করা হবে। ধান, গম, ভুট্টা, বার্লি এর ১০ হাজার ৫৩০টি, পাটের ১১৭০টি, মুগ মসুর সয়াবিনের ২৯২৫টি, সরিষা তিল সূর্যমূখী চীনাাবাদানে ৩১২০টি, মরিচ হলুদ পেঁয়াজ রসুন আদার ৪৪৮৫টি, সবজির ৫৮৫টি, ডার্মি কম্পোষ্ট এর ৩৯০টি, কম্পোষ্ট এর ৩৯০টি, খামারজাত জৈব সারের ৩৯০টি, ঘেরের আইলে সবজি চাষের ৩৯০টি, জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার ১৭৫৫টি, ব্লক প্রদর্শনী ধানের ৫৮৫টি, একক ফল বাগানের আম লিচু পেয়ারা মাল্টা, সবেদা, ড্রাগণ ফল, আমড়ার ৭৮০টি এবং আম লিচু পেয়ারা লেবু মালটা আমড়ার মিশ্র ফল বাগানের ৩৯০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। এদিকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে পিরোজপুর জেলায় ৫২১টি রবি মৌসুমের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হচ্ছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে ১১০২টি ক্ষুদ্রাকার কৃষি যন্ত্রপাতি, একশত ফুট ফিতা পাইপসহ ৩১২টি লো-লিফট পাম্প, ১৯৫টি হ্যান্ডরিপার, ৪০০টি হ্যান্ড স্পেয়ার, ১৯৫টি ফুট পাম্প কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুরের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় জানান, এ ৫ জেলায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার উৎপাদন, ফেরমন ফাঁদ, জৈব বালাই নাশক ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো হবে। ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে কৃষক প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের দানাদার ও অন্যান্য ফসলের কৃষি প্রদর্শনীর প্লট নির্মাণ ও প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপকূলীয় ও উপকূলের সন্নিকটের ৫ জেলায় বিভিন্ন জাতের ফসলের উৎপাদন ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাবে। কৃষক পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে।