মেহেরপুর মুক্ত দিবস আজ

420

॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : আজ ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র ভূমি মুজিবনগর-মেহেরপুর জয় বাংলা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। বিজয় উল্লাসে ফিরে আসতে শুরু করে ভারতে আশ্রিত মেহেরপুর- মুজিবনগরের মানুষ। কারণ ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর তথা মেহেরপুর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতি বছর দিবসটি মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে মুক্ত দিবস হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় একে একে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের সামরিক বলয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ৫ ডিসেম্বররাত থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী গোপনে মেহেরপুর ছেড়ে পালাতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী মেহেরপুর শহরে প্রবেশ করলে অবরুদ্ধ জনতা মিত্র বাহিনীর সঙ্গে জয়ের উল্লাসে যোগ দেয়। চারদিক থেকে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেহেরপুর। ভারতে আশ্রিত মানুষ জয় বাংলা স্লোগানে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করে। এবং লুকিয়ে রাখা লাল স বুজরেপতাকা দৃষ্টিকাড়া স্থানগুলোতে টাঙ্গিয়ে দেয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ডাকে স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুরের মুজিবনগর আ¤্রকাননে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। এরপরই তৎকালীন মেহেরপুরের এসডিও তৌফিক ই ইলাহির সক্রিয় ভূমিকায় ছাত্র-জনতা, আনসার-মুজাহিদদের নিয়ে মুক্তি বাহিনী গড়ে তোলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ ঘটনার বর্ণনা দেন জেলার প্রবীণ সাংবাদিক মেহেরপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক তোজাম্মেল আযম। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রথম সরকারে শপথ গ্রহণের পর মেহেরপুর কার্যত হানাদার বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সে অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে সড়ক পথে মেহেরপুর প্রবেশ করার সময় সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে হামলা চালায়। সেদিনই এ অঞ্চলের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে মেহেরপুর সরকারি কলেজ, ভকেশন্যাল ট্রেনিংইন্সিটিউট (ভিটিআই) ও কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে দিশেহারা পাক সেনারা মেহেরপুর থেকে পালাবার সময় দিন দত্তব্রিজ, খলিশাকুন্ডি ও তেরাইল ব্রিজ ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস করে বৈদ্যুতিক বিভিন্ন স্থাপনা। এসময় কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিকপরিসংখ্যন কারও জানা নেই।
ভীত সন্ত্রস্ত জনসাধারণ ঘর-বাড়ি, ভিটে-মাটি ত্যাগকরে এ জেলার সীমান্ত পার হয়ে ভারতের পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় গ্রহণ করে। প্রতিরোধ যুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষক-আনসার-মুজাহিদরা ও ভারতের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিতে থাকেন। সেই সঙ্গে ভারতের হৃদয়পুর, বেতাই, শিকারপুর, করিমপুর, কাচুলিয়া, বিহারসহ বেশ কয়েটি জায়গায় প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়।
ভারতীয় বাহিনীর তত্তাবধানে বাংলাদেশি তরুণরা গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রথম অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অস্ত্র না পাওয়ায় তাদের মনোবল ভেঙে পড়লেও দেশ স্বাধীনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকেই পাকসেনাদের ক্যাম্পাস লুট করে সে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বশির আহমেদ জানান, পাক সেনারা মেহেরপুর ছেড়ে গেলে সরকারি কলেজ ও ওয়াপদা মোড় এলাকার গণ কবরগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের কঙ্কাল সংগ্রহ করা হয়। সেসব হাড় গোড় কলেজ মোড়ে পৌর গোরস্থানের পাশে সমাহিত করা হয়। নাম নাজানা অসংখ্য শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় পরবর্তীতে সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিসৌধ।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান জানান, করোনা কারণে এবার সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে একটি বিজয় র‌্যালী ও আলোচনাসভা করা হবে।