বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত সুরক্ষায় সরকার বিজিবিকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তুলবে : প্রধানমন্ত্রী

123

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বিজিবি-ভাষণ
সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত সুরক্ষায় সরকার বিজিবিকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তুলবে : প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা করোনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার আমরা ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম আরো ২/৩ ভাগ কমিয়ে আনার। কিন্তু করোনার কারণে সেটা কিছুটা হয়তো থেমে গেছে। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে যেখানে আছেন (সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত) তারা হয়তো অসুস্থ হচ্ছেন তারপরেও দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
তিনি এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং করোনাকালীন জনগণের কষ্ট লাঘবে বিভিন্ন শ্রেনী পেশা এবং আম জনতার জন্য তাঁর সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন প্রণোদনার উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলকেই সহযোগিতা করছি যাতে সকলে নিজ নিজ অবস্থানে সুরক্ষিত থাকতে পারেন এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে পারেন।’
‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মুজিবর্ষে একটি মানুষও আর গৃহহারা থাকবে না। আর ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কালে দেশের প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ¦লবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে আবারো করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি বিজিবি সদস্যদের করোনাভাইরাস যেন ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘নিজে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি পরিবারের সদস্য এবং বন্ধু-বান্ধবদের সুরক্ষিত রাখার উদ্যোগ নেবেন।’
‘করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় যা যা করণীয় তার সবই সরকার করছে’, উল্লেখ করে তিনি ভ্যাকসিন সংগ্রহেও তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য আমরা টাকার বরাদ্দ দিয়ে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের সময়ে বিজিবি’র উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। আমাদের আশু, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আমরা বাংলাদেশকে যেমন গড়ে তুলছি তেমনি বিজিবিকেও ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
জাতির পিতা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করে গেলেও ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো-জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার কেউই ভারতের সঙ্গে এই চুক্তির বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বর্ডার গার্ডের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করেন সরকার প্রধান।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই কেবল দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পাশাপাশি, সীমান্তের উন্মুক্ত এলাকাগুলোতে নতুন নতুন বর্ডার পোস্ট তাঁর সরকার নির্মাণ করছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবিকে আরো শক্তিশালী করা এবং সীমান্তের প্রতিটি জায়গায় যেন তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয় সেব্যবস্থা নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘বর্ডার গার্ড ভিশন-২০৪১’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ, তাঁর সরকার এখন বিজেবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, ‘বাহিনীতে হেলিকপ্টারের সঙ্গে নদী মাতৃক এই দেশের সীমান্ত প্রহরায় নৌযান সংযুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে, জলে, স্থলে এবং আকাশ পথে-সর্বত্রই বিজিবি’র এখন বিচরণ রয়েছে। ১৫ হাজার জনবলের ধাপে ধাপে অন্তর্ভূক্তি এবং প্রশিক্ষণের উদ্যোগ ও নেয়া হয়েছে।’
তাঁর সরকারই বিজিবিতে প্রথম নারী সদস্য অন্তর্ভূক্ত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারী সদস্য আমরা নিতে শুরু করেছি। পাশাপাশি, আধুনিক সরঞ্জামাদি যা যা প্রয়োজন তার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করার মাধ্যমে বিজিবি’র উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি, বিজিবি সদস্য ও পরিবারবর্গের চিকিৎসা সেবায় বিজিবি’র ৫টি হাসপাতালকে আরও উন্নত করা হয়েছে। বিজিবি হাসপাতাল, ঢাকায় একটি অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাব ও করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা দেশব্যাপী প্রচারে অংশ নেয়ার কারণে চরম নির্যাতনে তৎকালীন ইপিআর সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিজিবি সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ৮১৭ জন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন। তাদের আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও বিজিবি’র নবীন সদস্যরা তাদের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা কঠিন কাজ ছিল। কারণ, করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ^টাকে স্থবির করে রেখেছে। যে কারণে, আজকের অনুষ্ঠানটিও তাঁকে ভার্চুয়াল করতে হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যাতে সংক্রমিত না হয় সেকথা চিন্তা করেই তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে করোনাকালীন বিভিন্ন কর্মসূচি ভার্চুয়ালি আয়োজন করে যাচ্ছে।’
সব বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক হিসেবে বক্ষ নম্বর-৪৩১ রিক্রুট মো. খোকন মোল্লা’কে প্রথম স্থান অর্জন করায় এবং বক্ষ নং-৬৮৭ রিক্রুট হাসিনা আক্তার বিথি শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হওয়ায় উভয়কে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৫৩৫/-আরজি