বাসস দেশ-৩ : বরিশাল মুক্ত দিবসে উন্মুক্ত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওয়াপদা টর্চার সেল

112

বাসস দেশ-৩
বরিশাল-টর্চার-সেল
বরিশাল মুক্ত দিবসে উন্মুক্ত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওয়াপদা টর্চার সেল
বরিশাল, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে আগামী ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবসে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওয়াপদা টর্চার সেল।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)-এর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিসিসি’র নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা টর্চার সেল।
নগরীর একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, আজ থেকে ৪৯ বছর আগে তৎকালীন পাকিস্তানীদের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত বরিশাল ওয়াপদা ভবনের টর্চারসেল এবং বাঙ্কারগুলো বর্তমানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মূলত বরিশালে পাক-হানাদার বাহিনী আসে ২৫ এপ্রিল। ওইদিন গানবোর্ড ও হেলিকপ্টারে করে পাক-হানাদার বাহিনীর একাধিক গ্রুপ বিসিক, চরবাড়িয়া ও স্টিমারঘাট এলাকা থেকে সন্ধ্যা হবার সাথে-সাথে শহরে প্রবেশ করে। ৩ মে নগরীর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনীর বেশ কয়েকটি ভবন দখল করে ক্যম্প ও টর্চারসেল স্থাপন করে। এখান থেকেই বৃহত্তর বরিশালের বিভিন্ন জেলায় অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে টর্চারসেলে মুক্তিযোদ্ধাসহ শত-শত নারী পুরুষ ধরে এনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা ও গুলি করে ফেলে দিতো পার্শ্ববর্তী খালে। তবে ওয়াপদা এই ক্যম্পে কতো মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার কোন হিসেব নেই। সাগরদী খালের কাছে পাক হানাদার বাহিনী একাধিক বাঙ্কার তৈরী করে পাহাড়া দিতো পাক সেনারা। আজও সেই বাঙ্কারগুলো পরে রয়েছে কালের সাক্ষী হয়ে।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানান, ওয়াপদা টর্চারসেল ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় এক আতংক। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের নির্মম নির্যাতনের নীরব সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) টর্চারসেলের ভবনগুলো। দীর্ঘদিন ধরেই স্থাপনাগুলোর সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতিগুলো। জেলা প্রশাসন কয়েক বছর আগে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। কাঙ্খিত সংস্কার কাজ সম্পন্ন না হলে, সিটি কর্পোরেশন’র (বিসিসি) উদ্যোগে টর্চারসেলের পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই স্মৃতি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে বরিশালের গৌরব গাঁথার ইতিহাস জানতে পারবে নতুন প্রজন্ম। বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের সকলের সহায়তায় আগামী ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবসে উদ্বোধন করা হবে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ২৫ এপ্রিল বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস-কোয়ার্টার ঘিরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা গড়ে তোলে। শুধু সামরিক স্থাপনা নয়, এই স্থানটি ছিল গণহত্যা ও নির্যাতনের কেন্দ্র। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুল অফিসে সামরিক কর্মকর্তার অফিস স্থাপন করেন। এছাড়াও পাকবাহিনী তিনটি আবাসিক কোয়ার্টারে বন্দিদের ধরে এনে নির্যাতন করতো। বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের ধরে এনে সামরিক অফিসাররা রাতভর নির্যাতন চালাতো।
এ ব্যপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কুতুব উদ্দিন জানান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে এই ওয়াপদা টর্চারসেল-এ অবস্থান করতো। কোন স্থানে সামরিক অপারেশনের জন্য এখানেই বৈঠক হতো। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সংলগ্ন খালে স্পিড বোর্ড, পাশে কীর্তনখোলার তীরে সার্বক্ষণিক গানবোট থাকতো। স্থানটিকে সুরক্ষিত করার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখানে দেয়াল উচুঁ করে চারদিকে অন্তত এক ডজনেরও বেশি সুরক্ষিত বাঙ্কার তৈরি করে। পাক-বাহিনীর নির্মিত এসব বাঙ্কারের বেশ কয়েকটি এখনো অটুট রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)-এর মেয়র সেরনিয়াত সাদিক আব্দুল্লাহ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডে’র ওয়াপদা টর্চারসেল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নৃসংশতার একটি অন্যতম দলিল। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পরই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওয়াপদা টর্চারসেলটি নতুন করে সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। মূলত ওয়াপদার এই টর্চারসেলে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়েছিল, তা তুলে ধরতে চাই নতুন প্রজম্মের কাছে। নতুন প্রজম্ম আসলে যাতে বুঝতে পারে আমাদের স্বাধীনতা কিভাবে এসেছিল। কিভাবে জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের (মুক্তিযোদ্ধা) এনে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হতো।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/১১৪৩কেজিএ