চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: নেইমারের জোড়া গোলে ম্যান ইউকে হারিয়ে টিকে থাকলো পিএসজি

534

লন্ডন, ৩ ডিসেম্বর ২০২০ (বাসস) : নেইমারের জোড়া গোলে ওল্ড ট্রাফোর্ডে গতকাল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ঘরের মাঠে লজ্জা দিয়েছে পিএসজি। ৩-১ গোলের দাপুটে এই জয়ের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্রুপ পর্ব থেকে আগে ভাগেই বিদায়েরও আপাতত শঙ্কামুক্ত হয়েছে প্যারিসের জায়ান্টরা। একই সাথে এই পরাজয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সামনে শেষ ১৬’তে যাওয়া কঠিন হয়ে গেল।
হাতে রয়েছে আর মাত্র একটি ম্যাচ। এই পর্যায়ে পিএসজি, ইউনাইটেড ও আরবি লিপজিগ তিনটি দলই এইচ-গ্রুপে সমান ৯ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে। কিন্তু আগামী সপ্তাহে শেষ ম্যাচের আগে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরাই এগিয়ে থাকবে। কারন ঘরের মাঠের ম্যাচটিতে তাদের প্রতিপক্ষ ইতোমধ্যেই বিদায় নেয়া নবাগত ইস্তাম্বুল বাসাকসেহির। অন্য দিকে টিকে থাকতে হলে লিপজিগ সফরে ইউনাইটেডকে অন্তত এক পয়েন্ট সংগ্রহ করতেই হবে।
পিএসজি বস থমাস টাচেল বলেছেন, ‘ওল্ড ট্রাফোর্ডে জয়ী হওয়া বিশে^র অন্যতম একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আজ পিএসজি প্রমান করেছে তারা আগেই হার মেনে নেয়নি। এখনো সব কাজ শেষ হয়ে যায়নি। এই ধরনের মানসিকতা নিয়েই সামনের ম্যাচগুলোতে এগিয়ে যেতে হবে।’
ওলে গানার সুলশারের দল ম্যানইউ দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। ম্যাচের ৬ মিনিটে নেইমারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল পিএসজি। মার্কোস রাশফোর্ড ৩২ মিনিটে ইউনাইটেডের হয়ে সমতা ফেরান। সুলশার বলেছেন, ‘আমরা বেশ কিছু ভাল সুযোগ পেয়েছিলাম। এই ধরনের বড় ম্যাচে সুযোগ বারবার আসে না, আমরা সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছি।’
৬৯ মিনিটে মারকুইনহোস আবারো পিএসজিকে এগিয়ে দেন। এর কয়েক সেকেন্ড পরেই ইউনাইটেডের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ফ্রেড দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন। বিরতির আগে ফ্রেড নিশ্চিত একটি লাল কার্ডের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। লিনার্দো পারেডেসকে মাথা দিয়ে আঘাত করার পরেও তাকে সে যাত্রা শুধুমাত্র হলদু কার্ড দেখানো হয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রেডকে অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিত ছিল বলে অনেকেই মত দিয়েছেন। সুলশারও বিষয়টি অনুধাবন করে ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘ পারেডেসকে ফ্রেড মাথা দিয়ে আঘাত করেনি। কিন্তু তারপরেও সে যা করেছে তাতে লাল কার্ড থেকে রেহাই পেয়েছে। আমি তাকে শান্ত থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটা তো কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।’
বুধবার দিনের প্রথম ম্যাচে ইস্তাম্বুল বাসাকসেহিরকে নাটকীয় ভাবে ৪-৩ গোলে পরাজিত করেছে লিপজিগ। যে কারনে পিএসজি মাঠে নামার আগে বেশ চাপের মুখে ছিল। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অবশ্য সফরকারীদের শুরুটাও ভালই হয়েছিল। ৬ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের ডিফ্লেকটেড শটে নেইমার খুব কাছে থেকে ডেভিড ডি গিয়াকে পরাস্ত করেন। ২৪ মিনিটে ফ্রেড লাল কার্ডের হাত থেকে রক্ষা পান। ইতালিয়ান রেফারি ড্যানিয়েল ওরসাতো রিভিউ দেখে শুধুমাত্র হলুদ কার্ডের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ৩২ মিনিটে রাশফোর্ড কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করে সমতা ফেরালে টাচেল কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন।
দ্বিতীয়ার্ধে বেশ আক্রমনাত্মক খেলা শুরু করে ইউনাইটেড। রাশফোর্ড ও এডিনসন কাভানির অসাধারণ সমঝোতায় এন্থনি মার্শাল গোলের সুযোগ হাত ছাড়া করেন। পার্ক ডি প্রিন্সেসে সাত মৌসুমে কাভানি পিএসজির হয়ে রেকর্ড ২০০ গোল করেছেন। জুনে চুক্তি শেষ হয়ে গেলে ফ্রি এজেন্টে তিনি পিএসজি ত্যাগ করে ইউনাইটেডে যোগ দেন। ৩৩ বছর বয়সী এই উরুগুইয়ান তারকা স্ট্রাইকার নাভাসের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়াতে পারেননি। আবারো মার্শালের প্রচেস্টা নষ্ট করে দেন মারকুইনহোস। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলে পিএসজির বস হিসেবে টাচেলের ভবিষ্যত চাপের মুখে পড়বে। এই শঙ্কা মাথায় নিয়ে হঠাৎ করেই কৌশল বদলে পিএসজি ম্যাচে ফিরে আসে। ৬৫ মিনিটে এন্ডার হেরেরা ও মিচেল বাক্কারকে মাঠে নামান টাচেল। মাঠে নেমেই বাক্কার একটি লো শটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার ডি গিয়া কোন ক্ষতি হতে দেননি। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অবশ্য পিএসজি আবারো লিড পায়। মারকুইনহোস বলেছেন, ‘আমরা জানতাম একটু কৌশলি খেলা খেললেই আমরা পার্থক্য গড়ে দিতে পারবো। তারা তাদের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছিল না। আর এতেই আমরা আত্মবিশ^াস ফিরে পাই। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা সাহস নিয়ে খেলেছি। কোচও বাইরে থেকে আমাদের আত্মবিশ^াস যুগিয়েছেন। আমাদেরকে ঝুঁকি নিতে বলেছে। এটাই ম্যাচে কাজে লেগেছে।’
৬৯ মিনিটে মারকুইনহোসের গোলের এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে ফ্রেডের লাল কার্ডে ইউনাইটেড ১০ জনের দলে পরিনত হয়। স্টপেজ টাইমে নেইমার আরো একটি গোল করলে দাপুটে জয় নিয়েই বাড়ি ফিরতে পারে পিএসজি। এর মাধ্যমে ২০১৯ সালে ইউনাইটেডের কাছে পরাজিত হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায়ের প্রতিশোধ কিছুটা হলেও নিতে পেরেছে প্যারিসের জায়ান্টরা।