বাসস দেশ-৬ : চট্টগ্রামে গতমাসে করোনায় সুস্থ ৭০ শতাংশের বেশি

127

বাসস দেশ-৬
চট্টগ্রাম-করোনা-সুস্থ
চট্টগ্রামে গতমাসে করোনায় সুস্থ ৭০ শতাংশের বেশি
চট্টগ্রাম, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : চট্টগ্রামে গত নভেম্বরে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার ৭০ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে, মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক মাসের রিপোর্ট বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া যায়। এতে ৩০ দিনের তথ্যে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে ৮ হাজার ৭৫০ জন নতুন জীবাণুবাহক শনাক্ত হয়েছেন। এ সময়ে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নেন ৬ হাজার ১৫০ জন। ১৯ নভেম্বর সর্বোচ্চ ৫০৫ জন সুস্থতার ছাড়পত্র নেন। এ মাসে আরো ছয়দিন চার শতাধিক ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নেয়ার তথ্য মেলে। এ ছয়দিনের সংখ্যা হলো , ২৯ নভেম্বর ৪৬৫ জন, ২৩ নভেম্বর ৪৬৩ , ২১ নভেম্বর ৪৪৫ , ২৫ ও ৩০ নভেম্বর ৪৩৪ জন করে এবং ২৭ নভেম্বর ৪১৪ জন। করোনামুক্ত হয়ে তিন শতাধিক ব্যক্তি ছাড়পত্র নেন পাঁচ দিন। ২২ নভেম্বর ৩৭৬ জন, ২০ নভেম্বর ৩৭৪ , ২৪ নভেম্বর ৩৫৭ , ২৬ নভেম্বর ৩৩৪ ও ২৮ নভেম্বর ৩৩২ জন। তবে সবচেয়ে কম সুস্থতার সনদ দেয়া হয় ৭ নভেম্বর। এদিন মাত্র ২৪ জন ছাড়পত্র গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত মাসে মারা গেছেন ১৫ জন। মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে দু’জন করে মারা যান দুই দিন – ২৩ ও ২৪ নভেম্বর। একজন করে আরো এগারো জন। নভেম্বর মাসে সংক্রমণের গড় হার ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ হার ২৮ নভেম্বর। এদিন ১ হাজার ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সাড়ে চার মাসের সর্বোচ্চ ২৯১ জন পজিটিভ পাওয়া যায়। করোনাক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়। সংক্রমণ হার ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সর্বনি¤œ শনাক্ত হয় ২৭ নভেম্বর। এদিন ১ হাজার ৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৮ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। সংক্রমণ হার ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি।
নভেম্বর মাসের পরিস্থিতি সম্পর্কে চট্টগ্রামের একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র জেনারেল হাসপাতালের করোনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ টিমের প্রধান, মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যন্ট ডা. মোহাম্মদ আবদুর রব আজ বাসস’কে বলেন, ‘গত মে-জুন মাসের তুলনায় ভাইরাস এখন অনেকটা কমেছে। জেনেটিক্যালি চেঞ্জ হয়ে এর ক্ষতির প্রবণতা কমে এসেছে। তবে যেকোনো মুহূর্তে আবারো এটা চরিত্র বদলাতে পারে। এ মুহূর্তে এটা ভারতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আছে।’
ডা. রব জানান, ‘করোনা সম্পর্কে শুরুতে মানুষের ধারণা ছিল না। সর্দি-কাশি জ¦র হলে আগে অনেকে তেমন গুরুত্ব দেননি। অনেক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে গেছেন করোনাক্রান্তরা। শেষ মুহূর্তে খুব বড় ডাক্তারেরও বেশি কিছু করার থাকে না। মানুষের এ মনোভাব পাল্টেছে। এখন সর্দি-কাশি জ¦র বা করোনার অন্যকোনো উপসর্গ দেখা দিলে মানুষ যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি না হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে করে জীবন-ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে না খুব বেশি আক্রান্ত রোগীকে।’
নভেম্বর পরিস্থিতি সম্পর্কে সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি আজ বাসস’কে বলেন, ‘চট্টগ্রামে মৃত্যুর হার ও সুস্থতার হার সন্তোষজনক। তবে এ মাসে সংক্রমণ যথেষ্ট বেড়েছে।’কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছিল না। এখন অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে, অতি প্রয়োজনীয় হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে।
তিনি বলেন, সাধারণ করোনা রোগী থেকে শুরু করে জটিল রোগীকে সেবা করার মতো সক্ষমতাও আমাদের চিকিৎসকদের হয়েছে। করোনা সম্পর্কে তাঁদের নলেজ আপডেটেড থাকছে। চিকিৎসকদেরও ভীতি কমেছে, বেড়েছে উৎসাহ। প্রয়োজন মতো রোগীরা ওষুধ-পত্র পাচ্ছেন। সাধারণ মানুষেরও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে। এসবেরই পূর্ন ফরাফল হিসেবে সংক্রমণের অনুপাতে ক্ষতি কম হচ্ছে।’
তবে সিভিল সার্জন মধ্য ডিসেম্বরের পর অবস্থার কিছুটা নেতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। পরিস্থিতি যেন আর খারাপ না হয় সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সামনের দিনগুলো সম্পর্কে ডা. আবদুর রব বাসস’কে বলেন, ‘শীতে করোনার প্রবণতা বাড়ে। খোদ প্রধানমন্ত্রী দু’মাস আগে জাতিকে সতর্ক করে দিয়ে অধিক সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরাও প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছি। যেকোনো বয়সের বা শ্রেণির মানুষের হেলাফেলা পুরো জাতির জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সচেতন করে হোক বা বাধ্য করে হোক স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে মানাতেই হবে।’
ডা. রব বলেন, ‘প্রথম দফার সময় আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক-দুইজন পেতাম। এখন একসাথে পুরো পরিবার আক্রান্ত হচ্ছেন, অর্থাৎ এক পরিবারে ৮/১০ জন থাকলে সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যুবকরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। স্বাস্থ্যবিধি কম মানছে। ফলে তারা সংক্রমিত হচ্ছে। অন্যদিকে, বয়স্করা বাইরে না গেলেও পরিবারের যুবকরা সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হচ্ছেন। দ্রুত সংক্রমণশীল করোনাভাইরাস এভাবে পরিবারের সব সদস্যকে আক্রমণ করছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে যুবকরা নিরাপদ থাকলেও বয়স্কদের শরীরের অন্যান্য জটিলতা মিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়। ক্ষেত্র বিশেষে চরম মূল্য দিতে হয়।’
তিনি আগামী এক থেকে দেড় মাস ধৈর্যধারণ করে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলার জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
বাসস/কেএস/কেসি/১২৪৮/-আসাচৌ