বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থেই নারী সমাজকে উন্নয়নের মুল স্রোতধারায় আনা প্রয়োজন

171

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
নারীর-ক্ষমতায়ন
রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থেই নারী সমাজকে উন্নয়নের মুল স্রোতধারায় আনা প্রয়োজন
ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস/ইউনিসেফ) : আজকের মেয়ে শিশু আগামীকালের নারী। সমতা, উন্নয়ন ও শান্তির লক্ষ্যসমুহ পরিপূর্ণভাবে অর্জনের জন্য মেয়ে শিশুর দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও শক্তির বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়ে সন্তান যেন তার পুর্ণ সম্ভাবনা বিকশিত করতে পারে। তাকে সক্ষম করে গড়ে তোলার সহায়ক পরিবেশে প্রতিপালিত হতে হবে, যেখানে তার টিকে থাকা, নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্য আত্মিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং বস্তুগত চাহিদা পুরণ এবং তাকে সমান অধিকার দিতে হবে।
অর্ধেক নারী সমাজকে পশ্চাৎপদ রেখে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থেই নারী সমাজকে উন্নয়নের মুল স্রোতধারায় আনা প্রয়োজন। নারী পুরুষের বৈষম্য দুরীকরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে সম্মলিতভাবে কাজ করতে হবে।
উন্নয়নের প্রত্যেক ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমান অংশিদার করতে হলে এখন থেকেই মেয়ে শিশুকে মানুষের মর্যাদা ও মূল্য দিতে হবে। তার মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাগুলো পরিপূর্ণভাবে ভোগ করার সুযোগ দিতে হবে। এর মধ্যে থাকবে সেইসব অধিকার, যার নিশ্চয়তা দেখা হয়েছে শিশু অধিকার বিষয়ক কনভেনশনে। এর সর্বজনীন অনুমোদন একান্ত জরুরী। পুষ্টি, শারিরিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ প্রায় ক্ষেত্রেই মেয়েদের কম থাকে। ছেলেদের তুলনায় তারা শৈশব-কৈশোরের অধিকার, সুযোগ ও সুফল ভোগ করতে তেমন পারে না। তারা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের যৌন ও অর্থনৈতিক হয়রানির শিকার হয়।
নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীল সম্পদে সমান প্রবেশাধিকার উৎসাহিত করতে হবে। সকল শ্রেণীর বিশেষ করে দারিদ্র্যে বসবাসরত নারীদের মৌলিক সামাজিক, শিক্ষাগত এবং স্বাস্থ্য চাহিদা পুরনের জন্য সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। আর্থিক ও ঋণ সহায়তার সুযোগ যাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠির সুবিধাবঞ্চিত নারী উদ্যোক্তারা পায় সে
পৃথিবীর প্রত্যেক অঞ্চলেই লিঙ্গ-বৈষম্য বিরাজমান। সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য দ্বারা সূচিত নারীকে সামাজিকভাবে কোনঠাসা করে রাখার প্রথা ও বৈষম্য প্রজšে§র পর প্রজš§ ধরে চলে আসছে। কারণ সামাজিক কাঠামোর মধ্যে নারী ও পুরুষের জন্য ছাচে-ঢালা যে ভূমিকা নির্ধারিত থাকে তাকে সকলেই মেনে নেয় এবং তার বিরুদ্ধে কেউ তেমন প্রতিবাদ করে না।
দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ প্রতিরোধ এবং প্রকৃত অর্থে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রয়োজনে সর্বোপরি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য জেন্ডার সমতা বিধান ও নারীর ক্ষমতায়নে অঙ্গিকারাবদ্ধ। এজন্য তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো হচ্ছে : জেন্ডার সমতা বিধান বিষয়ক শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক শিক্ষা।
আইন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন আনার মধ্যে দিয়ে লিঙ্গ সমতা করার জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নারীর সুযোগ ও বেছে নেয়ার সামর্থ এখনো সীমিত পর্যায়ে আছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখন জš§ নেয়া মেয়েদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ১৯৭৯ সালে সিডো সনদ গ্রহণ করার সময়ে জš§ নেয়া মেয়েদের ভবিষ্যতের তুলনায় অনেক বেশী উজ্জ¦ল।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে ১০, ১৯, ২৭, ২৮, ২৯ অনুচ্ছেদে নারীর অধিকার সুরক্ষা অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়নের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনার রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ প্রণীত নারীর প্রতি সকল বৈষম্য দূরীকরণ সনদ (সিডো) তে অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ।
লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অন্যতম চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নের জন্য নারীর ক্ষমতায়নের চেয়ে অধিকতর কার্যকর কোন হাতিয়ার নেই। অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে এর মতো কার্যকরী নীতি নেই। স্বাস্থ্য উন্নয়ন সুনিশ্চিত এবং এইডস প্রতিরোধেও নারীর ক্ষমতায়নের কোন বিকল্প নেই। শিশুর শিক্ষার সম্ভাবনা এবং তাদের বিকশিত করার জন্যেও নারীর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/হাবিবুর/আহো/১০৩০/কেজিএ