পি কে হালদারকে গ্রেফতার করার পরোয়ানা জারি না হওয়ায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

223

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : বিপুল অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) গ্রেফতার করার লক্ষ্যে ইন্টারপোলের জন্য আড়াই মাসেও পরোয়ানা জারি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পদক্ষেপের হালনাগাদ প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আদালত বলেন, “খুবই আনফরচুনেট! আড়াই মাস হয়ে গেল ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্টের একটা অর্ডার হল না।”
এর আগে আদালতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে পি কে হালদারকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে আদালতের কাছে পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আদালত ৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছে বলে জানান দুদকের আইনজীবী।
দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও সম্পত্তি-অর্থ জব্দের আদেশ দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুরোধ করা হলে ইন্টারপোল কিছু তথ্য চেয়েছে, যার মধ্যে আদালতের পরোয়ানা অন্যতম। গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে। পরোয়ানা জারি হলে পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করা হবে।এছাড়াও পিকে হালদার সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫৮টি ব্যাংক হিসাব ও ১৭টি কোম্পানির শেয়ার হিসাব জব্দ করার কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
গত ১৯ নভেম্বর এক আদেশে পিকে হালদারকে গ্রেফতার ও বিদেশ থেকে ফেরৎ আনার জন্য নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল আদালত।
সেদিন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বাসস’কে জানান, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নামে-বেনামে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এক পর্যায়ে তিনি গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না। এ কারণে একাধিক গ্রাহক আদালতের শরণাপন্ন হন। পরে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেন। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ পরে দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিলে হাইকোর্ট চলতি বছরের মার্চে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে।
একপর্যায়ে পি কে হালদার দেশে ফিরে অর্থ ফেরত দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার আগ্রহের প্রেক্ষিতে অর্থ উদ্ধারের জন্য আদালতের জিম্মায় ও তত্ত্বাবধানে তাকে নির্বিঘেœ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ পি কে হালদার কবে, কখন ও কোন ফ্লাইটে বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন, এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে বলেন। তখন দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে (ইকে ৫৮২) ২৫ অক্টোবর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে পি কে হালদারেরর দেশে ফেরার কথা আদালতকে জানানো হয়। এই ফ্লাইট সূচি উল্লেখ করে নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আরেকটি আবেদন করেছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। এর শুনানি নিয়ে গত ২১ অক্টোবর পি কে হালদার বিমান থেকে নামা মাত্রই গ্রেফতার করে তাকে উপযুক্ত আদালতে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে পি কে হালদার দেশে ফেরেননি।