বাংলাদেশের শহরগুলোতে কোভিড-১৯ বহনকারী সনাক্ত করবে মার্কিন সিডিসি

665

॥ তানজিম আনোয়ার ॥
ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ছয়টি প্রধান শহরে কোভিড-১৯ বহনকারী সনাক্ত করতে একটি সেরোলজিক্যাল জরিপ চালু করতে যাচ্ছে।
সিডিসির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মাইকেল ফ্রিডম্যান আরেকটি সংবাদ সংস্থাসহ বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাসসকে বলেন, এই গবেষণার ফলাফল আমাদের আরো অনেক তথ্য দেবে।
ফ্রিডম্যান বলেন, এই জরিপে বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা হার সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যাবে, যারা ততক্ষণে তাদের রক্তের সিরামে কোভিড-১৯ এন্টিবডি তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, এই গবেষণা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সম্ভাব্য মহামারী পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও রংপুরে জরিপ চালাতে ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে।
ফ্রিডম্যান আরও বলেন, আমরা আশা করছি জানুয়ারির শেষে ফলাফল পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের মহামারী, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ঢাকা ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ (আইসিডিডিআর,বি) এর আগে অক্টোবর মাসে প্রায় একই গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার প্রায় ৪৫ শতাংশ বাসিন্দা করোনাভাইরাস এন্টিবডি বহন করছে।
এর প্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ফ্রিডম্যান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই ধারণাটিকে সমর্থন করে বলে উল্লেখ করে সিডিসি নীতিগতভাবে ‘জনস্বাস্থ্য দৃষ্টিকোণ’ থেকে মহামারী সত্ত্বেও স্কুলগুলি পুনরায় চালু করার পরামর্শ দেয়।
তিনি বলেন, শিশুদের কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কম এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে এই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক কম।
ফ্রিডম্যান বলেন, কোভিড ছড়িয়ে পড়ার জন্য স্কুল কি বিপজ্জনক, না এাঁ কোভিড এর জন্য সত্য নয়, এটা ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য সত্য। এটা (কোভিড) ইনফ্লুয়েঞ্জার মত নয়।
মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ডব্লিউএইচও-এর নির্দেশিকায় আক্রান্ত দেশগুলোকে এই মহামারীর মধ্যে স্কুল খোলা রাখার চেষ্টা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ফ্রিডম্যান অবশ্য স্বীকার করেছেন মহামারীর মাঝে স্কুল পুনরায় খোলা একটি বিতর্কিত বিষয় এবং নীতি নির্ধারকদের জন্য একটি ‘বিশাল প্রশ্ন’। কিন্তু ‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে স্কুল বন্ধ এবং রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার মধ্যে আপনার কোনটি পছন্দ। আমি বলব রেস্টুরেন্ট বন্ধ করুন, কিন্তু স্কুল খোলা রাখুন।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে সারা বিশ্বের নীতি নির্ধারকরা স্কুলগুলো বন্ধ রেখে বর্তমান প্রজন্মের প্রাপ্তবয়স্কদের রক্ষা করার জন্য তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ উৎসর্গ করছেন।
ফ্রিডম্যান বলেন, অনলাইন শিক্ষা সকল ডিজিটাল সুবিধা সম্পন্ন উন্নত দেশগুলোতে কার্যকর হতে পারে ‘তবে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর (স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে) জন্য একই সামর্থ্য এবং সংস্থান নেই।
তিনি মহামারীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত দুটির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বেশ ভালো কাজ করেছে, এটাই কঠিন ভারসাম্য।
ফ্রিডম্যান বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক দূরত্ব প্রয়োগ করা একটি কঠিন কাজ, কিন্তু একই সঙ্গে হাত ধোয়ার মাধ্যমে সকল মানুষের জন্য মাস্কের আদেশ দেশটিকে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
ফ্রিডম্যান পেডিয়াট্রিক্স এবং ইন্টারনাল মেডিসিনের একজন দ্বৈত বোর্ড প্রত্যায়িত চিকিৎসক যার ২৭ বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চারটি মহাদেশে বৈশ্বিক কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সিডিসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তিনি প্রাথমিকভাবে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, জনস্বাস্থ্য গবেষণা এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্ডা বাস্তবায়নের উপর মনোযোগ প্রদান করেন।