চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনার প্রকোপ, চিকিৎসা-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ বিশেষজ্ঞদের

425

॥ কলিম সরওয়ার ॥
চট্টগ্রাম, ১ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে চিকিৎসা-সুবিধা আরো বাড়ানোর ওপর স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সরকারি হাসপাতাগুলোতে আরো অধিক সংখ্যক আইসিইউ বেড চালু এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া করোনা আইসোলেশন সেন্টারগুলো পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাসস’কে বলেন, ‘চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালে এ মুহূর্তে কোভিড রোগীদের জন্য ৩০টি আইসিইউ শয্যা আছে। এর মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে ১০ টি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি এবং হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০টি। হলি ক্রিসেন্টের আইসিইউতে ভেন্টিলেটর না থাকলেও ভেন্টিলেটর ছাড়াই এগুলো ব্যবহার করা যাবে। তবে, হলি ক্রিসেন্টের আইসিইউ’তে আপাতত রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। কারণ, চমেক ও জেনারেল হাসপাতাল দিয়ে প্রয়োজন মেটানো যাচ্ছে। হলি ক্রিসেন্টের আইসিইউ পূর্ণমাত্রায় চালু করতে হলে সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও এক্সপার্ট নার্স দিতে হবে। প্রয়োজন হলে আমরা সব লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে সেখানকার ১০ টি বেড খুব কম সময়ের মধ্যে চালু করতে পারবো।’
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বাসস’কে জানান, ‘গত কয়েকদিন ধরে আবারো আইসিইউ সিটের সংকট তৈরি হয়েছে। চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের একটি সিটও খালি নেই। এ অবস্থায় আইসিইউ সুবিধা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। জেনারেল হাসপাতালে ভেন্টিলেটরযুক্ত আরো আটটি আইসিইউ বেড আছে। আটটি মনিটর লাগালেই এগুলো সক্রিয় করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বেশ কিছু ডাক্তারও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি’র পরিচালক প্রফেসর ডা. এমএ হাসান, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর ডা. মুজিবুল হক খান, শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. বাসনা মুহুরীসহ সিনিয়র-জুনিয়র কয়েকজন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে, চিকিৎসকদের সুরক্ষায়ও পর্যাপ্ত সহযোগিতা দিতে হবে।’
তবে, করোনার চিকিৎসায় আইসিইউ অত্যাবশ্যক নয় জানিয়ে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বাসস’কে বলেন, ‘করোনায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সবচেয়ে বেশি দরকার। এর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। তবুও পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে, মানুষকে সচেতন হতেই হবে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের এ শহরে যত ব্যবস্থাই আমরা করি না কেন তা কখনো পর্যাপ্ত হবে না। সংক্রমণের আগে প্রতিরোধই সর্বোত্তম পদক্ষেপ। বারবারই এই একটা বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সার্ভিলেন্স কমিটির প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাসস’কে বলেন, ‘প্রথম প্রকোপের তুলনায় এ সময়ের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এখন আক্রান্তের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তির হার কম। চিকিৎসকদের কনফিডেন্স লেবেল ও অভিজ্ঞতা বেড়েছে। সাধারণ মানুষের ভীতিও আগের মতো নেই। অনেকে পরীক্ষাও করাচ্ছেন না। ঘরে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
মিজানুর রহমান জানান, ‘বেসরকারি হাসপাতালের গতকাল সোমবার সন্ধ্যার রিপোর্ট অনুযায়ী নগরীর ২০ ক্লিনিকে মোট আইসিইউ সিট আছে ১৩৩ টি। এর ৪০ টিতে কোভিড রোগী এবং ২৭ টিতে নন-কোভিড রোগী ভর্তি আছেন। বাকী আইসিইউ সিটগুলো খালি রয়েছে।’
স্বাস্থ্যসেবা খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ বলছেন, বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই, সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে এবং সুযোগও রয়েছে। নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আরও আটটি ‘ডেডিকেটেড’ আইসিইউ বেড বাড়ানোর সহজ সুযোগ রয়েছে।
জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওই আটটি আইসিইউ সিট সেটআপ করা আছে। খালি মনিটর হলেই সেগুলো সার্ভিসে যেতে পারবে। আমরা মনিটরের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছি। আশা করি শিগগিরই পেয়ে যাব।’
এদিকে, করোনার প্রথম প্রকোপের সময় চট্টগ্রামে খুব কম সময়ের মধ্যে চালু হওয়া আইসোলেশন সেন্টারগুলোর অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। নয়টির সাতটি বন্ধ হয়ে যায়। হালিশহরস্থ ৫০ শয্যার আল-মানাহিল ও ৩০ শয্যার বিজিএমইএ’র সেন্টার চালু ছিল। সম্প্রতি সাগরিকা বিদ্যানন্দ সেন্টারটি চালু করা হয়েছে। চসিককের আইসোলেশন সেন্টার চালু করার জন্য প্রস্তুত করতে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে ।
অন্যদিকে, আইসোলেশন সেন্টার চালু করার ইচ্ছে থাকলেও অর্থের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে কয়েকটির ক্ষেত্রে। প্রিন্স অব চিটাগাং-এ স্থাপিত ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার, চট্টগ্রাম-এর প্রধান উদ্যোক্তা এডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী বাসস’কে বলেন, ‘ডাক্তার-নার্সদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ১৫/ ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের নিয়মিত সংস্থান করা কঠিন। আমাদের সকল সরঞ্জাম অক্ষত আছে। স্বেচ্ছাসেবকরাও তৈরি আছেন। সরকারি-বেসরকারি যেকোনো পক্ষ থেকে বেতনের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে আমরা খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের সেন্টার চালু করতে পারবো।
তিনি করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রটি চালুর জন্য সরকার ও নগরীর বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গের প্রতি অনুরোধ জানান।