আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হান্নান খানের ইন্তেকাল 

614

ঢাকা, ২৯ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এম আব্দুল হান্নান খান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)।
আজ রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয় বলে সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক সাংবাদিকদের জানান।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আবদুল হান্নান খান স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সানাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, গত বৃহস্পতিবার হান্নান খানের জ্বর আসে। সেদিনই করোনাভাইরাসে পরীক্ষা করালে পজিটিভ আসে। জ্বর বেড়ে গেলে তাকে সিএমএইচে নেয়া হয়। সেখানে গত দুইদিন তার শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পৌনে একটার সময় তিনি মারা যান।
মাস খানেক আগে হান্নান খানের হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলন। তবে সেটা থেকে সেরে উঠে নিজ বাসায় বিশ্রামেই ছিলেন।
আবদুল হান্নান খান পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি তাকে আইজিপি পদমর্যাদায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা খলিশাউর খান পাড়ায় জন্ম নেয়া আবদুল হাননান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এম এ এবং এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ মহকুমার ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৪ সালে ডাকসু নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।একই বছর কার্জন হলে অনুষ্ঠিত কনভোকেশনে মোনায়েম খানের হাত থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীগন অস্বীকৃতির ঘটনায় ছয় মাস জেল খাটেন পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা।
অধ্যয়ন শেষে ১৯৬৫ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ, মৌলভীবাজার কলেজ, ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ ও জামালপরের আশেক মাহমুদ কলেজে অধ্যাপনা করেন।
১৯৭১ সালে ১১ নং সেক্টরের ঢালু সাব সেক্টরে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বিসিএস প্রথম ব্যাচে পুলিশ বিভাগে এএসপি হিসাবে যোগদান করেন আবদুল হাননান খান।
১৯৯৬ সালে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা’র প্রধান তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তখন পলাতক আসামী মেজর হুদাকে ব্যাংকক থেকে আনতেও সরকারী ভাবে তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এছাড়া জেল হত্যা মামলা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার ও তদন্ত তদারকি কর্মকর্তাও ছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হিসেবে ২০১১ সালে নিয়োগ পেয়ে আইজিপি পদ মর্যাদায় আমৃত্যু সংস্থার সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷