বাসস দেশ-৪৬ : সুনামগঞ্জে পৃথক মামলায় ৪৭ স্বামী খালাস

173

বাসস দেশ-৪৬
৪৭ স্বামী-খালাস
সুনামগঞ্জে পৃথক মামলায় ৪৭ স্বামী খালাস
সিলেট, ২৫ নভেম্বর, ২০২০( বাসস) : সুনামগঞ্জে ঘরসংসার করার শর্তে ৪৭ স্বামীকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার ৪৭ টি পৃথক মামলায় সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই রায় ঘোষনা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার হয়ে ৪৭ জন নারী পৃথকভাবে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন। মামলার ফলে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের পরিবারের মধ্যে চরম সম্পর্কের অবনতি ও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এতে তাদের সন্তানদের জীবন, নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান, আদর-যতœ, ভালবাসা, বর্তমান ও ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে যায়। স্ত্রী স্বামীর ঘর ছাড়া হয়ে সন্তানদের নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের পথে হাটছিলেন। বিগত কয়েক বছর ধরে এ মামলা গুলো আদালতে চলছিল। এক পর্যায়ে আদালত স্ব প্রণোদিত হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় আদালত কাউকে কারাগারে না পাঠিয়ে কিংবা বিচ্ছেদ না মেনে বাদি-বিবাদি (স্বামী-স্ত্রীকে) সহবস্থানে থেকে একত্রে বসবাস করার শর্তে আপোষ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পরে ৪৭ টি পৃথক মামলার বাদি-বিবাদির আপোষ নিষ্পত্তির অঙ্গিকারনামা পেয়ে আদালত একসঙ্গে দেওয়া রায়ে ৪৭ টি মামলার ৯৪ জন বাদি-বিবাদি (স্বামী ও স্ত্রীকে) একত্রে মিলেমিশে সংসার করার আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৪৭ দম্পতিকে ফুল দেওয়া হয়েছে।
আদালতের আপোষনামায় ৪৭ দম্পতি অঙ্গীকার করে বলেন, সন্তানাদি নিয়ে পরিবারের অন্যদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করবেন তারা। সংসারে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ করবেন না। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে যথাযোগ্য মর্যাদা দিবেন। স্বামী-স্ত্রী বা তার মা-বাবা ও অভিভাবকের কাছে যৌতুক দাবি করবেন না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমানিল্য ও বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করবেন। স্বামী কখনও স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না, স্ত্রীকে নির্যাতন করলে বা যৌতুক দাবি করলে স্ত্রী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
পরবর্তীতে স্বামী-স্ত্রী সকলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আইনজীবীরা। এসময় আদালত প্রাঙ্গণে যেন এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
এদিকে, ৪৭ মামলার আসামিদের খালাস প্রদানের রায়ের পর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ফুল ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় আদালত আঙিনায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় অনেক স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের। ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে দাঁনানো ৪৭ টি সংসার আদালতের রায়ে জোড়া লাগার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মামলার বাদি-বিবাদি, আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট নান্টু রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালতে পৃথক ভাবে দায়েরকৃত ৪৭টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন আদালত। সকল মামলার বাদি বিবাদিকে আপোষে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীকে মিলেমিশে পরিবারে একত্রে বসবাস করতে হবে। ভবিষ্যতে তারা ঝগড়-বিবাদ না করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবেন।
বিচার প্রার্থীরা এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানান, এ রায়ে তারা অনেক অনেক খুশি হয়েছেন,এমনটি হবে তারা কখনো ভাবতেও পারেন নাই,এর ফলে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের পাশাপাশি তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল হবে। যদি মা-বাবা আলাদা হয়ে যেত তা হলে সন্তানের ভবিষ্যৎ হুমকির সম্মুখীন হত। এখন তারা মিলে মিশে সংসার করলে দাম্পত্য জীবনে সুখের পাশাপাশি সন্তানদেরও মানুষ করা সম্ভব।
বাসস/সংবাদদাতা/এফএইচ/২২২০/এবিএইচ