সাংবাদিকদের আয়কর ও গ্র্যাচুইটি নিয়ে হাইকোর্ট রুল

578

ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের আয়কর ও আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) সংক্রান্ত নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের মূল রোয়েদাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সুপারিশের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
রুলে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের দ্বাদশ অধ্যায়ে সংযুক্ত সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের আয়কর ও আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) সংক্রান্ত বিধান কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়েছেন আদালত। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড বোয়েদাদ, ২০১৮ এর দাখিলকৃত সুপারিশসমূহের সঙ্গে মন্ত্রীসভা কমিটি সুপারিশ গ্রহণ করে জারি করা গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘সকল শ্রেনির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের উপর আরোপিত আয়কর সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারিগণ কর্তৃক তাদের নিজ নিজ আয় হতে প্রদান করতে হবে।
সকল শ্রেনির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কমর্রত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারিগণ প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’
গত রোববার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুজ্জামান এই দুটি বিধান চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেন। রিটটি দাখিল করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম (মিলন)।
রিটের পক্ষে আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ আদেশের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, রিট আবেদনে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায় অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকেই সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কর্মচারিীদের বেতনের উপর আয়কর পরিশোধ করতে হবে।
সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে আয়কর পরিশোধ করতে দায়বদ্ধ এবং বাধ্য। কিন্তু নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে আয়কর চাপানো হয়েছে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের ওপর।
এছাড়া, নবম মজুরি বোর্ডে সপ্তম অধ্যায়ে দুটি আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রিরিষদ একটি মূল বেতনের সমান আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেয়ার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশটিও নবম মজুরি বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে গ্রহণ করা হয়েছে, যা স্ববিরোধী বা সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৪৯ (২) ধারা অনুযায়ী শ্রমিকদের বিদ্যমান কোন সুবিধা কেটে নেয়ার সুযোগ নেই।
ড. আকতার হামিদ বলেন, যেহেতু দুই মাসের মূল বেতনের সমান আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকর ছিল এবং নবম মজুরি বোর্ডের সপ্তম অধ্যায়ে বিষয়টি আইনসিদ্ধ করা হয়েছে, সেহেতু একটি মূল বেতনের আনুতোষিক দিতে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশ বেআইনি। এই যুক্তি আমরা তুলে ধরলে আদালত আয়কর ও আনুতোষিকের বিষয়ে রুল জারি করেছেন।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানিতে বলেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা চাকুরি বিধিমালা, ১৯৯৫ (সংশোধনী-২০১৩) বিধি ৫০ এর (২) এ বলা আছে যে, ‘কোন কর্মচারিকে তাহার প্রত্যেক পূর্ণ বৎসর বা আংশিক বৎসরের ক্ষেত্রে ১২০টি কার্যদিবসে বা তদূর্ধ্ব কোন সময়ের চাকরির জন্য ২ মাসের মূল বেতনের হারে আনুতোষিক প্রদান করা হইবে।’
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। পরে বিচারপতি নিজামুল হক ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
তার ভিত্তিতে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশ করে সরকার।