বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : করোনাকালেও দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা চালু আছে

113

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
নারী-গর্ভবতী-স্বাস্থ্য
করোনাকালেও দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা চালু আছে
ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : রেহানা আর কামালের বিয়ে হয়েছে দু’বছর আগে। বিয়ের সাত মাসের মাথায় গর্ভবতী হয় রেহেনা। প্রথম সন্তান। তাই বাড়ির সবাই খুব আনন্দিত। বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার মানিকপুর গ্রামে। উপজেলা সদর থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। প্রায়ই প্রতি মাসে একবার করে উপজেলায় এসে ডাক্তারের সাথে দেখা করে বিভিন্ন পরামর্শ নিতেন স্বামী-স্ত্রী দু’জনে। ডাক্তারের পরামর্শ মতে গত মে মাসের ২১ তারিখে ছিল রেহানার প্রথম ডেলিভারীর দিন। কিন্তু করোনার কারণে সব কিছুই বন্ধ। সবাই খুব দু:শ্চিন্তায় পড়ে গেল। তারপরও কামাল একদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, অন্যান্য অনেক সেবা বন্ধ থাকলেও গর্ভবতী মায়েদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা চালু আছে।
নির্দিষ্ট তারিখের পাঁচ দিন আগেই ভর্তি হয়ে যান রেহানা। সেখানে ১৯ মে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন রেহানা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে গর্ভবতী মায়েদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা চালু রয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিকটস্থ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে গর্ভকালীন সেবা নেয়া যাচ্ছে। সকল গর্ভবতী নারী যেকোন ধরনের জটিলতা এড়াতে নিকটস্থ যেকোন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে পারবেন। দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এএনসি অর্থাৎ প্রসবপূর্ব এবং পিএনসি বা প্রসবোত্তর সেবা কর্ণার রয়েছে। এবং এসব কর্ণারে মিডওয়াইফসহ দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মীরা রয়েছেন।
নাসিমা বলেন, এ সব কর্ণার থেকে সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে গর্ভবতী মায়েদের প্রসব পূর্ব এবং পরবর্তী সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি এএনসি এবং পিএনসি কার্ডে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে। প্রয়োজনে সে সব নাম্বারে ফোন করেও স্বাস্থ্য সেবা নেয়া যাবে।
তিনি বলেন, গর্ভকালীন সময়ে নারীদের অনেক ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে পাঁচ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। আর এসব সমস্যাগুলো হল চোখে ঝাপসা দেখা বা তীব্র মাথা ব্যাথা হওয়া, প্রসবের পূর্বে হঠাৎ রক্তপাত হওয়া, ভীষণ জ্বর হওয়া, খিচুনী হওয়া, এবং প্রসব বিলম্বিত হওয়া। এসব সমস্যার যেকোন একটি দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে হবে।
ডা. নাসিমা বলেন, গর্ভবতী মায়েদের প্রতি পরিবারের সকল সদস্যদের বিশেষ যতœ নিতে হবে। এ সময় তাদের (গর্ভবতী মায়েদের) ভালো মানের পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে। যেমন- টাটকা ফল, শাক-সব্জি, আমিষ জাতীয় খাবার, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি। কারণ এ সময় মায়ের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের দিকেও নজর দিতে হয়। গর্ভের সন্তানের বয়স যত বাড়বে খাবারের পরিমানও বাড়াতে হবে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রথম তিন মাস একশ থেকে ২শ ক্যালরী খাবার বেশী দরকার। দ্বিতীয় তিন মাসে দুইশ থেকে চারশ ক্যালরী এবং তৃতীয় তিন মাস স্বাভাবিকের চেয়ে চারশ ক্যালরী বেশী খাবার প্রয়োজন গর্ভবতী নারীদের।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সেবা দিতে হয়। গর্ভাবস্থায় তারা যেন কোন ধরনের ভারী কাজ না করে সে দিকে পরিবারের অন্য সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় মায়েদের মানসিক অবস্থার দিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ এ সময় অনেক নারীই বিমর্ষ হয়ে পড়েন। মাঝে মাঝে তারা ভয়ও পায়। তাই তাদের মনকে চাঙ্গা রাখতে সব সময় তার সাথে কথা বলতে হবে। তার কি সমস্যা হচ্ছে তা জেনে নিতে হবে। যাতে করে সে বুঝতে পারে যে কেউ একজন বা তার পরিবার তার প্রতি মনযোগী এবং সব সময় তার কেয়ার করছে।
ডা. মনোয়ারা বলেন, বর্তমানে আমরা একটি মহামারি পার করছি। এ সময় সবাইকে সজাগ এবং সচেতন থাকতে হবে। আর গর্ভবতী মা এবং শিশুদের প্রতি আরো বেশী মনোযোগী হতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এই মহামারী থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মানুষ বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা যেন সকল ধরনের সেবা পায় সে জন্য সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে গর্ভকালীন সেবা প্রদান করছে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/আহো/১৭৩০/স্বব