বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো কেয়ার গিভার পেশায় জাপান যাচ্ছেন নারীরা

232

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : প্রথমবারের মত জাপানে কেয়ার গিভার (শুশ্রুষাকারী) পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের ৭ জন নারী জাপানে যাবার জন্য চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (বিজিটিটিসি) এ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কেয়ার গিভার পেশার নারীরা বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিটিটিসি’র অধ্যক্ষ রিনা আখতার জাহান বাসসকে জানান, বিশ্বে কেয়ার গিভার-এর জনপ্রিয়তা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই এ পেশায় আগ্রহী হচ্ছেন। এ পেশা বেছে নিতে নার্সিং বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রির প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। বিএমবিটি’র দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এবার অনলাইনের মাধ্যমে ২৫ জন নারী কেয়ার গিভারের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ৯ জন উত্তীর্ণ হন। চলতি বছরে এরমধ্যে ৭ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী শুশ্রুষাকারী হিসেবে চূড়ান্তভাবে জাপানে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। শিগগিরই তারা জাপানে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে বরিশাল, সুনামগঞ্জ, খুলনা ও বান্দরবান থেকে মেয়েরা এসেছেন। যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর।
রিনা বলেন, জাপানের গড় আয়ু ৮৭ বছর। ফলে বৃদ্ধ ও অশক্ত মানুষের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি সেখানে ব্যস্ত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ফলে এসব বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এবারই প্রথম এ ধরনের কেয়ার গিভার পাঠানো হচ্ছে। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের সঙ্গে এবার যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, কেয়ার গিভার বা শুশ্রুষাকারী ধারণাটি বাংলাদেশে নতুন মনে হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এবারের এই উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে। অনেকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার অর্গানাইজেশন অব জাপান (আইএম জাপান) এর সাথে বাংলাদেশের একটা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তি হয়েছে। সেই এমওইউ অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিজিটিটিসি’র অধ্যক্ষ বলেন, কেয়ার গিভার হিসেবে যাওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণার পাশাপাশি জাপানী ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে তাদের দক্ষ হতে হবে। জাপানী ভাষা লিখতে ও বলতে পারেন এমন নারীরাই কেয়ার গিভারের জন্য নির্বাচিত হন। আগ্রহী প্রার্থীদের দিনব্যাপী প্রি ডিসিশন মোটিভেশনাল ব্রিফ করানো হয়। পরবর্তীতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কয়েকটি কঠিন ধাপ পার হবার পরই কেয়ার গিভারের জন্য যোগ্য হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয় তাদেরকে।
তিনি বলেন,কেয়ার গিভার নারীরা জাপানে মাসব্যাপী এক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর চাহিদামাফিক চাকরিস্থলে যোগদান করবেন। মাস শেষে তারা ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা দেশে তাদের পরিবারের কাছে পাঠাতে পারবেন। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ -জার্মান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইন্সট্রাকটর সোহেল প্রিন্স বলেন, কেয়ার গিভারের জন্য যারা জাপানে যাবেন তারা প্রত্যেকেই প্রশিক্ষণকালে দ্রুত শিখে নিচ্ছেন জাপানীভাষা ও তাদের সংস্কৃতি।দেশের বিভিন্নস্থান থেকে এসে তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। তাদের বেশিরভাগ অনার্স পড়ুয়া। কেউ কেউ আবার গ্রাজুয়েশনও শেষ করেছেন।
স্নাতক শেষ করা বরিশালের সাবিহা আনোয়ার সোনিয়া জেলার টিটিসি থেকে জাপানী ভাষায় প্রশিক্ষণ নিয়ে কেয়ার গিভার হিসেবে জাপান যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এটি একটি ভাল উদ্যোগ।এর ফলে অনেকে কর্মসংস্থানের জন্য এ পেশায় এগিয়ে আসবে।