বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (২য় ও শেষ কিস্তি) আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ব্যাপক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায় অর্থনীতি সচল রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

179

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (২য় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-প্রকল্প উদ্বোধন-ভাষণ
আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ব্যাপক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায় অর্থনীতি সচল রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ’৭৫-এর হত্যাকান্ডের পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে জোর করে দেশে ফিরে আসেন।
সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকাঙ্খার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত এবং উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরন করবো বলে।’
তিনি বলেন, একটাই সিদ্ধান্ত ছিল এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে। যা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তরিক ভাবে চেয়েছিলেন এবং দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার জন্য নিজের জীবন তিনি উৎসর্গ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ায় দেশের জনগণের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা পুণর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তারা বারবার আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশসেবা এবং তাদের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ’৭৫ এর পর বাংলাদেশ অন্ধকারে ছিল। তবু, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর একটু আলোর ঝলকানি পেয়েছিল। তবে, আমরা একটা চক্রান্তের কারণে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে না পারায় আবারো অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন আর অন্ধকারে দেশ ডুবে যায় এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে আরো ৮টি বছর চলে যায়।
তিনি তিনটি সেতু নির্মাণের কারণে স্থানীয় জনগণের জীবন মানে যে পরিবর্তন ঘটবে বলে সরকার আশা করছেন তার একটি খতিয়ান তুলে ধরে পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রফিকুল ইসলাম বকুল একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তিনি (শেখ হাসিনা) যখন ’৮১ সালে প্রবাস জীবন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফেরেন তখন বারংবার বাধার সম্মুখীন হন। তখন যে কয়েকজন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সাহসে ভর করে সে কঠিন অবস্থার মোকাবেলা করেছেন তার মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল অন্যতম।
স্মৃতি রোমন্থনে বহু বছর আগে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় এই রফিকুল ইসলাম বকুলের সঙ্গে তাঁর একটি স্মরণীয় ঘটনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে-কি প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁকে রাজনীতি করতে হয়েছে তারও একটি নমুনা উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশের আসার পর থেকে বার বার আমি বাধাগ্রস্থ হতাম, বিএনপি প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাকে বাধা দেয়। কোপাকুপি, বোমা হামলা, গাড়ি আক্রমণ, মঞ্চ পুড়িয়ে দেওয়া, জনসভায় হামলা সবই চলতো।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন খুলনা থেকে রাজশাহী রওনা হলাম পথিমধ্যে হাজারো মানুষের ঢল। ভীড় ঠেলে যেতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। ঈশ^রদী পৌঁছাতেই রাত্রি প্রায় ১১টা বেজে যায়। সেখানে পৌঁছে শুনলাম আমাদের নাটোরের জনসভার মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়েছে। সেখানে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে তাদের কুপিয়েছে, গুলি করেছে, আমাকে সেখানে যেতে দেবে না এবং সেখানেই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পিছিয়ে যাব না। আমি যাবই।’
প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, আমরা তখন তাকে বকুল মামা (মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল) বলে ডাকতাম। তাকে বললাম আমার সাথে আপনার কর্মী দিতে হবে এবং ট্রাক ভাড়া করতে হবে যেহেতু অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মঞ্চ পুড়িয়েছে, বিএনপি আমাদের ঢুকতে দেবে না, কিন্তু আমরা ঢুকবোই। সেখানে ৪০/৫০ জন কর্মীও একটি বাহিনী নিয়ে ট্রাক ভাড়া করে বকুল মামা আমাদের সাথে ছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি ছিল না, খুলনার লাইনের একটা বাস ভাড়া করে আমরা যাচ্ছিলাম, মানুষের চাপে সে বাসের কয়েকটি গ্লাসও ভেঙ্গে যায়। নাটোরে ঢোকার মুখের রেল ক্রসিংয়ে প্রচন্ড বোমাবাজি শুরু করলো বিএনপি। বকুল মামা তার লোকজন নামিয়ে আক্রমণকারিদের ধাওয়া দিল। যদিও সেখানে বিএনপি সেদিন একটি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। তবু, আমরা সেখানে আহতদের উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ট্রিপ করে করে অসংখ্য আহত নেতা-কর্মীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে রাস্তার ওপরই একটা জনসভা করে আসলাম।
‘সেই চরম দুঃসময়ে এই রফিকুল ইসলাম বকুল আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই পাবনা ছিল সর্বহারাদের একটা জায়গা। আর স্বাধীনতার পর পর সব স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানের দোসররা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যার জন্য একদিকে যেমন ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি অন্যদিকে জামায়াতের একটা বিরাট ঘাঁটি। একাত্তরের বিজয়ের পরপরই আল্ট্রা লেফটিস্ট পার্টি, রাজাকার, সর্বহারারা সব একসঙ্গে জুটে গেল সেখানে। যে কারণে সেখানে সব সময়ই একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল এবং আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে সেখানে হত্যা করা হয়।
এক সময় সেখানে দলের গ্রুপিং থাকায় মুকুল মামাকে এক সময় দলত্যাগ করতে হলেও সে গ্রুপিং এখন নেই বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘একটা মানুষ চলে যেতে পারে কিন্তু একটা মানুষের যে অবদান আমি সেটাকে কখনও অস্বীকার করি না এবং আমি তা করবো না। তার অবদানটা আমাদের মনে রাখতে হবে। কারণ, সে একজন মুক্তিযোদ্ধা।’ তার নামে এই চত্বরটি করায় তিনি অঞ্জন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭৩০/আরজি