বাসস ক্রীড়া-১ : ‘সন্ত্রাসবাদ থেকে পর্যটন’-ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সফর পাকিস্তানকে অনুপ্রাণীত করবে

116

বাসস ক্রীড়া-১
ক্রিকেট-পাকিস্তান-ইংল্যান্ড-সফর
‘সন্ত্রাসবাদ থেকে পর্যটন’-ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সফর পাকিস্তানকে অনুপ্রাণীত করবে
ইসলামাবাদ, ২০ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস/এএফপি): সফরকারী শ্রীলংকান ক্রিকেট দলের ওপর মরণঘাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার পর আগামী বছর ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের প্রথম সফর পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। তারপরও চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০০৯ সালে লাহোরে টেস্ট খেলতে যাবার সময় লংকান দলের উপর ওই হামলার পর দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশী সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে থেকে নির্বাসিত ছিল ক্রিকেট পাগল পাকিস্তান। ওই ঘটনায় কয়েকজন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা আহত হওয়ার পাশাপাশি মারা গেছে আটজন নিরাপত্তা কর্মী।
শ্রীলংকা দলের ওপড় হামলাটি পাকিস্তানের জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের আরেকটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যে যুদ্ধে দেশটিতে ১০ হাজারেরও বেশী মানুষ নিহত হয়েছে এবং ক্ষুন্ন হয়েছে আন্তর্জাতিক ভাবমুর্তি।
কিন্তু সেনা বাহিনীর বছর ব্যাপী অভিযানে পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমুল উন্নতি ঘটেছে। এবং কিছু দেশ সেখানে সফরের ব্যাপারে নমনীয় হয়েছে।
পাকিস্তানে দায়িত্বরত ব্রিটিশ হাই কমিশনার ক্রিস্টিয়ান টার্নার বৃটেনের স্কাই নিউজকে বলেন,‘গত ৫ বছরে এখানে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। এখন পাকিস্তানের দরকার বাস্তবতা উপলব্ধি করা।
আমাদের পর্যবেক্ষনে ২০১৫ সালের পর নিরাপত্তাজনীত অপরাধের হার ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমি মনে করি এ জন্য পাকিস্তান প্রশংসা পাবার দাবীদার।’
আগামী বছর ১৪ ও ১৫ অক্টোবর করাচিতে দুটি টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। ২০০৫ সালের পর ইংলিশ ক্রিকেট দলের এটিই হবে প্রথম পাকিস্তান সফর। গত গ্রীষ্মে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফরের পরিপ্রেক্ষিতে ইংলিশদের এই সফর। করোনা মাহামারিতে বিপর্যস্ত ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে পাকিস্তান তাদের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজে অংশ নিয়েছিল।
সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা ও বিশ^ একাদশকে আতিথেয়তা দিয়েছে পাকিস্তান। ঘরোয়া লীগ পিএসএলেও অংশ নিয়েছে বেশ কয়েকজন ইংলিশ ক্রিকেটার।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক কামার চিমা মনে করেন এ ধরনের ইভেন্ট বহির্বিশে^ পাকিস্তানের ভাবমুর্তির উন্নতি ঘটাবে। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন,‘ উগ্রবাদ ও উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের পর পাকিস্তান চায় বিশ^বাসী তাদের দেশকে স্বাভাবিক দেশ হিসেবে দেখুক।’
তিনি বলেন,‘ এই মুহুর্তে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের জন্য উপযুক্ত। সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো যথেষ্ঠ কাজ করেছে।’
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদের মুলোৎপাটন করতে পারেনি। এখনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নগর এলাকায় সশস্ত্র হামলা করার ক্ষমতা রয়েছে। চিমা বলেন,‘আদর্শিকভাবে অনুপ্রানীতদের একক হামলার সুযোগ এখনো রয়ে গেছে।’
কর্মকর্তারা এখনো আশা করছেন ক্রীড়া ইভেন্টগুলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদ থেকে পর্যটন গন্তব্যে’ পরিণত করে দিবে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল এই স্লোগানটিই ব্যবহার করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল এএফপিকে বলেন,‘ পাকিস্তানের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ উন্নতি ঘটেছে। এখন এখানে অনেক খেরাধুলার আয়োজন করা যাবে। কয়েকটি দেশের ক্রীড়া দল সফর করে গেছে।’
পাকিস্তান সফর সহজ করার জন্য গত বছর থেকে ইলেক্ট্রনিক ভিসা (ই-ভিসা) চালু করেছে পাকিস্তান। এক দশকেরও পর পাকিস্তানে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তান-বৃটেন ফ্লাইট চালু করবে ভার্জিন আটলান্টিক।
বিদেশী দলগুলোকে রাস্ট্রপতি বা সরকার প্রধান সমমানের নিরাপত্তা দেয় পাকিস্তান। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয় অভিজাত কমান্ডো। দল যাতায়াতের সময় মোতায়েন করা হয় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সশস্ত্র দল। সাধারনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় ভেন্যু মুখি যাতায়াতের রাস্তাঘাট।
ভেন্যুর নিপারপত্তায় বিভিন্ন ছাদে বসানো হয় স্নাইপার। দর্শকদেরকে নির্দিষ্ট দূরত্বে গাড়ী রেখে হেঁটে যেতে হয় ভেন্যুতে।
গুল বলেন,‘ নিরাপত্তার বাড়াবাড়ির কারণে সাধারন নাগরিকরা কিছুটা সময়ের জন্য অবশ্য ভোগান্তিতে পড়েন। কিন্তু এর বিনিময়ে তারা পাচ্ছে আন্তর্জাতিক দলের অংশগ্রহন।’ ইংল্যান্ড সফরের আগে ২০২১ সালের শুরুতে পাকিস্তান সফর করেব দক্ষিন আফ্রিকা ক্রিকেট দল।
পাকিস্তান দলের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান কোচ মিসবাহ উল হক বলেন,‘ আগামী বছর যদি ইংল্যান্ড সফর সম্পন্ন করা যায়, তাহলে আমি নিশ্চিত অন্য বড় দলগুলোও আমাদের আয়োজনের প্রতি আস্থা পাবে।’
বাসস/এএফপি/এমএইচসি/১৫৩৫/-স্বব