বাঙালির স্বাধীকার অর্জনে জাতির পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতারও অসামান্য অবদান রয়েছে

552

ঢাকা, ১১ নভেম্বর ২০২০ (বাসস) : আওয়ামি লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, বাঙালীর স্বাধীকার অর্জনে জাতির পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতারও অসামান্য অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, বেগম মুজিবের দুটি ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড় নির্ধারণ করেছিল, একটি প্যারোলে বাঁধা দেয়া, আর একটি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। তিনি বলেন, এ দুই ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মাইল ফলক ছিল।
তিনি আজ সংসদে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী- মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন, কর্ম, আদর্শ, দর্শনের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ নভেম্বর সংসদ কার্যপ্রনালী বিধির ১৪৭ ধারায় জাতির পিতার জীবন, কর্ম, আদর্শ, দর্শন তুলে ধরে এ মহান নেতার প্রতি জাতির পক্ষ থেকে সংসদে বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সংসদে পর পর ৪ কর্যদিবস সরকারী-বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ আর সংগ্রামমুখর জীবনের বিভিন্ন দিকের ওপর বিস্তারিতভাবে আলোচনা, স্মৃতি রোমন্থন ও এ মহান নেতার আদর্শ ধারন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আজ আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু, উপাধ্যক্ষ্য আব্দুস শহীদ, আ ফ ম রুহুল হক, রমেশ চন্দ্র সেন, মুসলিম উদ্দিন, হুইপ ইকবালুর রহিম, আ ফ ম বাহাউদ্দিন, আমিরুল আলম মিলন, মুসলিম উদ্দিন আহমেদ, বেগম সুবর্ণা মোস্তফা, বেগম রোমানা আলী, জাসদের হাসনুল হক ইনু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির হারুন অর রশীদ, গণফোরামের মোসাব্বির খান এবং তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুর বশর মাইজভান্ডারি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামি লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বার বার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আন্দোলন – সংগ্রামের মাধ্যমে জাতির পিতা বাঙালির অধিকার আদায় করেছেন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু জীবনবাজী রেখে জাতিকে মহামূল্যবান স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি মুসলিম আওয়ামী লীগ, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গঠন, ভাষার দাবি, মহান ২১ ফেব্রুয়ারী, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট ও সাধারণ নির্বাচনে বিজয়, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র বাঙালির ম্যাগনাকাটা খ্যাত মুক্তি সনদ ৬দফার ভিত্তিতে আন্দোলন, ৬৯’ গণঅভ্যূত্থান, ৭০’এর নির্বাচন, সবশেষে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার নির্দেশণা, তাঁর নেতৃত্বে সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও ঘটনাক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা, আর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পথে দু’টি মাইল ফলক। ৬ দফার মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনে বাঙালিকে জাগ্রত করে সংগঠিত করেছিল। আর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের কৌশল এবং নির্দেশনা সর্বোপরি স্বাধীনতার ঘোষণা।
তিনি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে বেগম মুজিবের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর সকল সিদ্ধান্ত বেগম মুজিব আমাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তিনি আমাদের আর্থিক সহায়তাসহ আন্দোলন সংগ্রামের পরামর্শ দিতেন। আগরতলা মামলা হওয়ার পর তিনি (বেগম মুজিব) আমাদের বলেছেন, তোমরা ঘাবড়িও না, তোমাদের নেতা ঘাবড়াননি। তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্ত মানুষের মতো বের হয়ে আসবেন। তারপর আন্দোলনের মাথায় যখন বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি প্যারোল মেনে নিয়েছিল। সেই মিটিং হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বসে। কিন্তু একমাত্র বেগম মুজিব এর বিরোধীতা করে বলেছিলেন না এটা হতে পারে না। মুক্ত মানুষ হিসেবে ৩৫ জন সহকর্মী নিয়ে মাথা উঁচু করে বের হতে হবে। সেদিন সেইভাবে বঙ্গবন্ধু বের হয়েছিলেন। বেগম মুজিবের দুটি ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড় নির্ধারণ করেছিল একটি প্যারোলে বাঁধা দেয়া, আর একটি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। এ দুই ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মাইল ফলক।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশকে দ্রুত পুর্নগঠন করে সুখী- সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাঠামো দিয়েছিলেন। কিন্তু ৭৫’ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হওয়ায় সে কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আজ তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবায়ন করছেন।