বেতিয়ারা শহীদ দিবস আজ

384

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১১ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস): ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের বেতিয়ারা এলাকায় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৯ বীরযোদ্ধা পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এ ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল করে রাখতে প্রতি বছর ১১ নভেম্বর পালিত হয় বেতিয়ারা শহীদ দিবস।
করোনার কারণে এ প্রথম বড় কোনো আয়োজন ছাড়াই শহীদ পরিবারের সদস্যরা পৃথকভাবে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দোয়া-মোনাজাত করবে বলে জানিয়েছে বেতিয়ারা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি জিয়াউল হক জিবু। বেতিয়ারায় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নিহতরা হলেন; নিজাম উদ্দিন আজাদ (ছাত্রনেতা), সিরাজুল মনির, জহিরুল হক দুদু, মোহাম্মদ সফিউল্যাহ, আওলাদ হোসেন, আবদুল কাইউম, বশিরুল ইসলাম, মো. শহীদ উল্যাহ ও কাদের মিয়া।
বেতিয়ারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিবু বাসসকে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাতৃভূমিকে শক্রমুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা সভাপতি মনজুরুল আহসান খানসহ যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৭৮ জন সদস্য ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ভারতের বাইকোয়া বেইজ ক্যাম্প থেকে ১০ নভেম্বর রাতে চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী ভৈরবনগর সাব ক্যাম্পে পৌঁছান।
ভৈরব নগর সাব ক্যাম্পের দুই মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বিএসসি ও সামসুল আলম ১১ নভেম্বর রাতেই গেরিলা বাহিনীর ওই দলটির বাংলাদেশে প্রবেশের পরিকল্পনা তৈরি করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক শক্রমুক্ত কিনা পরীক্ষা করার জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের ও আবদুল মন্নানকে ওই সড়কে পাঠানো হয়।
সিগনালের দায়িত্বে থাকা কাদের ও মান্নান মহাসড়ক শক্রমুক্ত বলে রাত ১২টায় মূল বাহিনীকে জানায়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৩৮ জনের এ দলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অতিক্রমের জন্য এগিয়ে আসে। এ সময় সড়কের অন্য (পশ্চিম) পাশে গাছের আড়ালে অ্যাম্বুশ পেতে লুকিয়ে থাকা হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। এতে ৯ গেরিলা যোদ্ধা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
এক সপ্তাহ পর স্থানীয় লোকজন ধানক্ষেত থেকে শহীদদের গলিত লাশগুলো উদ্ধার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেন। ২৮ নভেম্বর চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদীঘি নামের ওই অঞ্চল শক্রমুক্ত হয়। পরদিন ২৯ নভেম্বর স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা গর্ত থেকে লাশগুলো উঠিয়ে জানাজা দিয়ে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে দ্বিতীয়বার দাফন করেন। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হলে ৯ শহীদের গণকবর ও স্মৃতিস্বম্ভ মহাসড়কের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে ফোরলেন প্রকল্পের ঠিকাদার ২০১৪ সালের জুনে গণকবরটি মহাসড়কের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথের ৪০ শতক জায়গায় স্থানান্তর করেন।