তিন পেনাল্টি ও আত্মঘাতি গোলে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে অসহায় আত্মসমর্পন রিয়ালের

377

মাদ্রিদ, ৯ নভেম্বর ২০২০ (বাসস) : ম্যাচটিকে নাটকীয় বলা যায় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে, তবে এই ধরনের ম্যাচ সচারাচর খুব একটা চোখে পড়েনা। ভাগ্য একবার বা খুব বেশী হলে দুইবার সহায় না-ও হতে পারে। কিন্তু কাল ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষ ভাগ্যদেবী কোনদিক থেকেই রিয়াল মাদ্রিদকে জিততে দিবে না, এই পণ করেই মেস্তালার মাঠে এসেছিল। একে একে তিনটি পেনাল্টি ও সাথে আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় শেষ পর্যন্ত বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে লা লিগায় ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ধুকতে থাকা ভ্যালেন্সিয়া। পেনাল্টি থেকে তিন গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেছে কার্লোস সোলার।
অথচ করিম বেনজেমার হাত ধরে ২৩ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল মাদ্রিদ। কিন্তু তারপর ভ্যালেন্সিয়া একে একে চারটি গোল উপহার পেয়েছে, যার মধ্যে তিনটি পেনাল্টি ও একটি রাফায়েল ভারানের আত্মঘাতি গোল। আর এতেই রিয়াল মাদ্রিদের মৌসুমের প্রথম পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে।
ম্যাচ শেষে মাদ্রিদ বস জিনেদিন জিদান বলেছেন, ‘এই ধরনের পরাজয়ের কোন মানে নেই, এখানে কোন যুক্তি দেয়ারও কিছু নেই। এটা একটি বাজে ম্যাচ ছিল, মোট কথা দিনটি আমদের ছিলনা।’
২০১৮ সালের অক্টোবরে বার্সেলোনার কাছে পাঁচ গোল হজমের পর এই প্রথম মাদ্রিদের জালে চারবার বল পাঠালো ভ্যালেন্সিয়া। মৌসুমের শুরুটা ভাল না হলেও দাপুটে এই জয়ে অনেকখানি এগিয়ে গেল লিগ টেবিলের নবম স্থানে উঠে আসা ভ্যালেন্সিয়া।
এদিকে গত মাসে নবাগত কাডিজের বিপক্ষে লা লিগায় ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে পরাজয়ের পর জিদানের দল বার্সেলোনা, হুয়েস্কা ও ইন্টার মিলানের বিপক্ষে জয় দিয়ে দারুনভাবে লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু কালকের এই লজ্জাজনক পরাজয়ে আন্তর্জাতিক বিরতির আগে আবাবো ব্যাকফুটে চলে গেল গ্যালাকটিকোরা। লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা রিয়াল সোসিয়েদাদের থেকে চতুর্থ স্থানে থাকা মাদ্রিদের পয়েন্টের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ালো চার। তার উপর ম্যাচের ৭৬ মিনিটে বেনজেমার ইনজুরি নতুন করে রিয়ালকে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছে। কুঁচকির ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছেন এই ফ্রেঞ্চম্যান।
এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে পাঁচজন খেলোয়াড় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ভ্যালেন্সিয়া, বিনিময়ে একজন খেলোয়াড়কেও নতুন করে দলে ভেড়াতে পারেনি। সে কারনেই মৌসুমের শুরুতেই একটি বড় ধাক্কা খায় গত আসরে টেবিলের উপরের দিকে থাকা দলটি। কালকের ম্যাচ শুরুর আগে তাদের পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান ছিল ১৭তম। এক জয়েই এক লাফে উঠে এসেছে ৯ম স্থানে। জার্ভি গার্সিয়ার দলের জন্য এই জয়টা হয়তবা শেষ পর্যন্ত ভাগ্য গড়ে দিতে পারে।
যদিও ভ্যালেন্সিয়া গোলগুলোর প্রতিটি ছিল অনেকটাই অনাকাঙ্খিত। তবে রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে তিন বার পরাস্ত করতে কোন ভুল করেননি সোলার। এর মধ্যে প্রথম শটটি তো মিসই করেছিলেন সোলার। কিন্তু বেলজিয়ান কোর্তোয়া লাইনের উপর থেকে সড়ে আসায় আবারো শট নেয়ার সুযোগ পান সোলার। দ্বিতীয়বার শট নিতে গিয়ে অবশ্য আর কোন ভুল করেননি স্প্যানিশ এই মিডফিল্ডার। করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ায় কাল মাঠে ছিলেন না কাসেমিরো ও এডেন হ্যাজার্ড। কিন্তু বড় এই পরাজয়ে আবারো মাদ্রিদের রক্ষনভাগের দূর্বলতা সামনে চলে এসেছে। গত মৌসুমে নিজেদের মধ্যে একাত্মতাই শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল যা এবার কিছুটা হলেও ফিকে মনে হচ্ছে। গত সাত ম্যাচের সবকটিতেই তারা গোল হজম করেছে।
জিদানও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই রক্ষনভাগে আরো শক্তিশালী হতে হবে। আর সেটা করতে পারলে আক্রমনভাগও আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠবে।’
বেনজেমার গোলে এগিয়ে যাবার পর মাদ্রিদ অবশ্য খুব বেশীক্ষন সেই লিড ধরে রাখতে পারেনি। ৩৫ মিনিটে লুইস গায়ার ক্রস ডি বক্সের ভিতর লুকাস ভাসকুয়েজের হাতে লাগলে পেনাল্টি পায় ভ্যালেন্সিয়া। যদিও বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুক্ষন প্রতিবাদ করেছিল সফরকারীরা। সোলারের পেনাল্টি রুখে দেন কোর্তোয়া। ফিরতি বলে ইউনুস মুসা বল জালে জড়ান। কিন্তু রিপ্লেতে ধরা পড়ে মুসা কিছুটা আগেভাগে বক্সে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু কোর্তোয়া তার লাইন থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন যা বৈধ নয়। ফলে আবারো শট নেবার সুযোগ পান সোলার। দ্বিতীয় শটে আর ভুল হয়নি সোলারের। ৪৩ মিনিটে ভারানের আত্মঘাতি গোলে এগিয়ে যায় ভ্যালেন্সিয়া।
এক গোলে পিছিয়ে থেকে অনেকটাই আগ্রাসী হয়ে বিরতির পর মাঠে নামে মাদ্রিদ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা আরো বেশ শক্তিশালী ভাবে করেছিল স্বাগতিকরা। তারই ধারাবাহিকতায় আরো দুটি পেনাল্টি উপহার পাবার আগে লি ক্যাং-ইনের শট বারে লেগে ফেরত আসে। ম্যাক্সি গোমেজকে ফাউলের অপরাধে মার্সেলোর বিপক্ষে ও মুসাকে অবৈধভাবে ট্যাকেল করায় সার্জিও রামোসের বিপক্ষে দুটি পেনাল্টি আদায় করে নেয় ভ্যালেন্সিয়া। স্পট কিক থেকে একে একে দুই গোল করে সোলার তার হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি দলকে বড় জয় উপহার দেন।
দিনের আরেক ম্যাচে গ্রানাডাকে ২-০ গোলে পরাজিত করে লা লিগা টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে সোসিয়েদাদ। ২২ মিনিটে নাচো মনরিয়াল সোসিয়েদাদকে এগিয়ে দেবার পর ২৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুন করেন মিকেল ওয়ারজাবাল। শনিবার কাডিজকে পরাজিত করে স্বল্প সময়ের জন্য শীর্ষস্থানটি দখল করেছিল এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। লা রিয়ালদের থেকে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এ্যাথলেটিকো, কিন্তু হাতে রয়েছে বাড়তি দুটি ম্যাচ।
এদিকে গেতাফেকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে উনাই এমেরির ভিয়ারিয়াল।