মুম্বাই’র পঞ্চম, না-কি দিল্লির প্রথম!

789

দুবাই, ৯ নভেম্বর ২০২০ (বাসস) : আগামীকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পর্দা নামছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের ত্রয়োদশ আসরের। টুর্নামেন্টের ফাইনালে লড়বে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও দিল্লি ক্যাপিটালস। পঞ্চমবারের মত শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ফাইনাল খেলতে নামবে মুম্বাই। অন্য দিকে প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠে শিরোপার আনন্দে শিহরিত হতে চায় দিল্লি। দুবাইয়ে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় শুরু হবে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ফাইনালটি।
গেল ২৯ মার্চ থেকে নিজ দেশে আইপিএলের ত্রয়োদশ শুরু করার বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। কিন্তু মার্চ থেকে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে আইপিএল শুরু করতে পারেনি বিসিসিআই।
পরবর্তীতে আইপিএল শুরুর জন্য সঠিক সময়ের সন্ধানে ছিলো বিসিসিআই। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাতিলে আইপিএল আয়োজনের জন্য নড়েচড়ে বসে বিসিসিআই। অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় শুরুর কথা ছিলো টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু করোনার কারনে এ বছরের বিশ্বকাপ পিছিয়ে যায় দু’বছর।
ফলে সেপ্টেম্বর থেকে আইপিএলের ত্রয়োদশ আসর শুরু করে বিসিসিআই। নিজ দেশে করোনার সংক্রমন বেশি থাকায় মরুর দেশে আইপিএলের পর্দা উঠে। কড়া জৈব-সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আটটি দলকে নিয়ে গেল ১৯ সেপ্টেম্বর আবু ধাবিতে শুরু হয় আইপিএল।
কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই ডাবল লিগ পদ্ধতিতে ৫৬টি ম্যাচ শেষ হয়। তাতে ১৪টি করে ম্যাচ খেলে একেকটি দল। সেখানে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষ স্থান দখল করে মুম্বাই। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি। ১৪ করে পয়েন্ট পেয়ে যথাক্রমে টেবিলের তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। পয়েন্ট টেবিলের এই শীর্ষ চারটি দল প্লে-অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
হায়দারাবাদ ও ব্যাঙ্গালুরুর সাথে পয়েন্ট সমান ছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্সেরও। কিন্তু রান রেটে পিছিয়ে পড়ে পঞ্চমস্থানে থেকে আসর শেষ করতে হয় ব্যাঙ্গালুরুকে।
প্লে-অফে শীর্ষ দুই দল মুম্বাই ও দিল্লি প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে মুখোমুখি হয়। সেখানে দিল্লিকে ৫৭ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মত ফাইনালে উঠে মুম্বাই। ম্যাচ হেরে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে জায়গা পায় দিল্লি।
পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় ও চতুর্র্থ দল মুখোমুখি হয় এলিমিনেটরে। সেখানে ব্যাঙ্গালুরুকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে দিল্লির প্রতিপক্ষ হয় হায়দারাবাদ। দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে দিল্লি কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় হায়দারাবাদ। আর ফাইনালে মুম্বাইয়ের প্রতিপক্ষ হয় দিল্লি। এবারের আসরে চতুর্থবারের মত মুখোমুখি হবে মুম্বাই ও দিল্লি।
লিগ পর্বে প্রথম দেখায় দিল্লিকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিলো মুম্বাই। ফিরতি পর্বেও বড় ব্যবধানে জয় পায় মুম্বাই। ৯ উইকেটে জিতে তারা। আর প্লে-অফে অনায়াসে দিল্লিকে পরাস্ত করে মুম্বাই। তাই ফেভারিটের তকমা নিয়ে দিল্লির বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে নামবে মুম্বাই। ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে শিরোপা জয় করেছিলো মুম্বাই। পঞ্চমবারের মত আইপিএলের শিরোপা জিতে চান মুম্বাইয়ের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘পুরো আসরেই আমরা খুব ভালো খেলেছি। দলের সবাই প্রত্যেক ম্যাচে অবদান রেখেছে। এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় জিতলেই পঞ্চমবারের মত শিরোপা জিততে পারবো আমরা। পঞ্চমবার শিরোপা জিততেই মাঠে নামবো আমরা।’
অন্য দিকে এই প্রথম আইপিএলের ফাইনালে দিল্লি। প্রথম ফাইনালেই বাজিমাত করতে চান দিল্লির অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। তিনি বলেন, ‘এই প্রথম আইপিএলের ফাইনালে আমরা। ফাইনালটি উপভোগ করতে চাই। শিরোপা জিততে পারলে, আরও ভালো লাগবে। শিরোপা জয়ই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
পুরো আসর জুড়েই দারুন পারফরমেন্স করেছে মুম্বাইয়ের টপ-অর্ডার। ওপেনার দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক, ইষান কিশান, সূর্যকুমার যাদব। এখন পর্যন্ত ডি কক-কিশান ৪৮৩ রান করে ও সূর্য ৪৬১ রান করেন। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ড-হার্ডিক পান্ডিয়ার মারমুখী ব্যাটিং মুম্বাইকে অনেক জয়ের স্বাদ দিয়েছে।
দিল্লির হয়ে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ছিলেন ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। ১৬ ইনিংসে ৬০৩ রান করেছেন ধাওয়ান। ফাইনালে ৬৮ রান করতে পারলেই এবারের আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হবে তিনি। কারন ৬৭০ রান নিয়ে রান সংগ্রহের তালিকায় শীর্ষে আছেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। আইয়ারের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫৪ রান।
এবারের আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের লড়াইটা এখন দিল্লির দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার কাগিসো রাবাদা ও মুম্বাইয়ের জসপ্রিত বুমরাহর মধ্যে। ১৬ ম্যাচে ২৯ উইকেট রাবাদার। আর ১৪ ম্যাচে ২৭ উইকেট বুমরাহর। তাই বোলিং বিভাগে রাবাদা-বুমরাহ দ্বৈরথও দেখা যাবে।