বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি সদস্যরা এখন জলে স্থলে ও আকাশপথে বিচরণ করবেন : প্রধানমন্ত্রী

126

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বিজিবি এয়ার উইং-ভাষণ
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি সদস্যরা এখন জলে স্থলে ও আকাশপথে বিচরণ করবেন : প্রধানমন্ত্রী

বিজিবি’কে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস করেছি। একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আজ অত্যন্ত দক্ষ, সুসংগঠিত এবং গতিশীল একটি বাহিনী।’
শেখ হাসিনা বলেন, গত প্রায় ১২ বছরে বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৫টি রিজিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এ বাহিনীকে আরও গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। নতুন ৪টি সেক্টর ও ৫টি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ও ১৫টি ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও নতুন ১৪০টি বিওপি, ৩৪টি বিএসপি এবং একটি এয়ার উইং সৃজন করার মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে বিজিবি’র জনবলও বৃদ্ধি করে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ১৪৬ জন জনবল নিয়োগ করেছে, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এ বাহিনীতে আরও ১৫ হাজার জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে যা তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৪ হাজার ২৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি রিজিয়ন সদর দপ্তর, একটি সেক্টর সদর দপ্তর এবং ৪টি ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট, একটি রিজিয়ন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, একটি স্টেশন সদর দপ্তর, একটি গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সৃজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। যার মাধ্যমে এই বাহিনী আরো শক্তিশালী হবে, যোগ করেন তিনি।
দ্বিতীয় ধাপে মোট ৫ হাজার ৭৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি সেক্টর, পাঁচটি ব্যাটালিয়ন, একটি রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট এন্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং পাঁচটি বর্ডার গার্ড হাসপাতালের জনবল বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, ২০১৫ সালে বিজিবি’তে প্রথম নারী সৈনিক নিয়োগের মাধ্যমে এ বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে এ বাহিনীতে নারী সদস্যের সংখ্যা ৮৪১ জন।
বিজিবি’র কর্মকান্ডে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘ সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকা নির্বাচন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩২৮ কিলোমিটার সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাকটিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
এছাড়াও, ডিজিটাল মোবাইল রেডিও (ডিএমআর) নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিওপি এবং বিওপি পরিচালিত টহলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বিজিবি’র অপারেশনাল সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং কেন্দ্র থেকেই যেকোন সময় যেকোন সিদ্ধান্ত দেওয়া এবং বাস্তবায়ন করা যাবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজিবি’র দৈনন্দিন দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজকে সহজ করার লক্ষ্যে ‘সীমান্ত ডাটা সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ভূমিকম্পের বিষয়টি বিবেচনায় এনে বিজিবি কর্তৃক যশোর অঞ্চলে ‘ডিজাস্টার রিকভারী’ (ডিআর) সাইট নির্মাণ করা হচ্ছে যা বিজিবিসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্যরাও ব্যবহার করতে পারবে।
তিনি বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে টহল কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিজিবি’র জন্য ১২০টি অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল (এটিভি) ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি’র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১২টি আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) এবং ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল ক্রয় করা হয়েছে।
বিজিবি’র বহরে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ১২টি হাইস্পীড বোট এবং ২টি পন্টুন সংযুক্ত করা হয়েছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিজিবি’র জন্য অত্যাধুনিক দু’টি ফাস্ট ক্রাফট, সমুদ্রগামী ৭টি অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোট, দু’টি মেরিনা এবং দুইটি ট্রেইলার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবন সংলগ্ন জলসীমায় কার্যকরী টহল পরিচালনার পাশাপাশি মায়ানমার সীমান্তে এসব উন্নত নৌযান মোতায়েন করে নাফনদী ও সাগর উপকূলে ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি অধিক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, বিজিবি সদস্যদের অপারেশনাল কর্মকান্ডে ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা মূল্যের মাদক ও চোরাচালান দ্রব্য আটক করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বিডিআর বিদ্রোহের প্রতি ইঙ্গিত করে এ ধরনের ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত আখ্যায়িত করে এই ধরণের ঘটনা যেন আর ঘটতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আর ঘটুক তা আমি চাই না। কারণ, এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা নিজেদের, বাহিনীর এবং দেশের ক্ষতি সাধন করেছে।’
তিনি বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের রুহের মাগফিরাতও এ সময় কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণের শুরুতে জাতির পিতা এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট শাহাদৎ বরণকারী তাঁর পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় চারনেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী বিজিবি সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে গিয়ে আত্মাহুতি দানকারী তৎকালিন ইপিআর সদস্যদেরকেও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তাঁর ভাষণে শীতকালে পুণরায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়া নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করে সবাইকে সতর্ক থাকার এবং বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের আহ্বানও পুণর্ব্যক্ত করেন।
বাসস/এএসেজি-এফএন/১৪৫০/আরজি