বাজিস-৪ : নওগাঁয় একটি খাল পুনঃখনন করায় রক্ষা পাবে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো

205

বাজিস-৪
নওগাঁ-খাল পুনঃখনন
নওগাঁয় একটি খাল পুনঃখনন করায় রক্ষা পাবে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো
নওগাঁ, ৭ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : নওগাঁ সদর উপজেলায় কয়েকটি বিলের ভিতর দিয়ে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার একটি খাল পুনঃখননের ফলে একদিকে এসব এলাকার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান বন্যায় ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। অন্যদিকে অতিরিক্ত ৩ হাজার হেক্টর জমি আমন ও রবি শস্য আবাদ করা সম্ভব হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাপানিয়া, দুবলহাটি বলিহার ও হাঁসাইগাড়ি ইউনিয়নের বন্যার বিল, মনসুর বিল, পাকুড়িয়ার বিল, নলীর বিল, বারমাসিয়া বিল, হ্যামড়ার বিল ও গুটার বিলসহ অন্যান্য ছোট ছোট বিলের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত এ ৩৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন কাজ হাতে নেয়া হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেয়। ইতিমধ্যে কাজটির প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হলেও খালটি পুনঃখননের উদ্দেশ্য সফল হতে শুরু করেছে। অর্থাৎ এর সুফল কৃষকরা ইতিমধ্যে ভোগ করতে শুরু করেছেন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষের নওগাঁ জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বরেছনে প্রতি বছর এপ্রিলের শুরুতে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ফলে এসব বিল এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়তো। এর ওপর মহাদেবপুর, পতœীতলা, মান্দা উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হওয়া বলিহার খাল, হাটচকগৌরী খাল, মারমা-হাপানিয়া খাল দিয়ে উজানের ঢল বা অতিবৃষ্টির পানি এসে এসব বিলে জমা হতো। খালটি কালের প্রবাহে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এসব জমাকৃত পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা ছিলো না। এতে এসব এলাকার সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পুরোপুরি ও আংশিকভাবে পানিতে তলিয়ে যেতো। এতে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতেন।
প্রতিবছর কৃষকদের এ আহাজারি দেখে তাদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মালেক বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পটি দাখিল করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক-এর সভায় তা অনুমোদন প্রদান করেন।
ফলে একদিকে যেমন এ খালে প্রচুর পরিমাণ পানি ধারণ হবে, অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পানি এসব বিলে জমা না হয়ে আত্রাই নদীতে গিয়ে পড়বে। এতে এসব এলাকার সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান রক্সা পাবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৩৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ছাড়াও ৫টি সাব-মার্জড ওয়ারসহ ফুট ব্রিজ এবং ৩টি পারাপারসহ ড্যামক্রসডেন ইত্যাদি নির্মাণের ফলে বিল এলাকার জনসাধারণের পারাপার এবং খালের পানি দ্বারা সেচ প্রদান করে আরো অতিরিক্ত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছর মার্চের শেষ সপ্তাহ এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মোট ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও বৃষ্টির পানি খননকৃত খাল ধারণ করার ফলে ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি।
খাল খননের ফলে উপকৃত কৃষকদের মধ্যে হাঁসাইগাড়ি গ্রামের আলেপ উদ্দিন, গোপাই গ্রামের ইনছান আলী মাষ্টার এবং ভীমপুর গ্রামের সাইদুর রহমান বলেছেন, এ খাল পুনঃখনন আমাদের জন্য আশির্বাদ। আমার এসব জমির ফসল ঘরে তুলতে পারি না। কিন্তু খাল খননের ফলে আমার বোরো ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছি। এ ছাড়াও যেসব জমিত কোনদিন ফসল হতো না সেসব জমিতে আমন চাষের সম্ভাবন দেখা দিয়েছে।
নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মালেক বলেছেন আমি স্থানীয় একজন সামান্য রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এ এলাকার কৃষকদের যে কান্না আহাজারী খুব নিকট থেকে অনুভব করেছি। তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এর সুদূরপ্রসারী কল্যাণ নিহিত থাকায় প্রধানমন্ত্রী একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন প্রদান করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিঃসন্দেহে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবেন।
বাসস/সংবাদদাতা/১১১৫/আহা/-নূসী