বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : দারিদ্র্য নির্মূলে বহুমুখী গ্রাম সমবায় সমিতি গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

191

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সমবায় দিবস-ভাষণ
দারিদ্র্য নির্মূলে বহুমুখী গ্রাম সমবায় সমিতি গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

কতগুলো জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করে সরকারের পাশাপাশি সমবায়ীদের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিজড়াদের প্রসংগে বলেন, মহান আল্লাহই তাদের এভাবে জন্ম দিয়েছেন কাজেই তাদের নিজেদের কোন দোষ নেই। কাজেই তারা কেন পরিবারের অংশ হিসেবে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হতে পারবে না এবং কাজ পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাসমান বেদে সম্প্রদায়কে মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকার জায়গা দিয়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সমবায় সমিতি করে দেওয়ার মাধ্যমে জীবন-জীবিকায় নতুন করে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করি এরপর ২০১২ সালে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিকে একাডেমিতে রূপান্তরিত করি এবং সেখান থেকে মানুষকে বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক অগ্রগতি ও নারী-পুরুষ সমতার উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে পল্লী-দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি বলেন, সরকার জাতীয় সমবায় নীতিমালা-২০১২, পুনরায় সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন- ২০১৩ এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করেছে।
জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা প্রদর্শিত পথই একমাত্র পথ, যে পথে দেশকে আমরা এগিয়ে নিতে পারি।’
তিনি জাতির পিতার বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতা বলতেন- আমাদের লোকসংখ্যা বেশি, কিন্তু চাষ উপযোগী জমির পরিমান কম। সেজন্য চাষের জন্য যেমন যান্ত্রিকীকরণ দরকার তেমনি উৎপাদিত পণ্য যাতে বাজারজাত এবং বিক্রী করা যায় সে জন্য সমবায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নতি করতে হলে একেবারে তৃণমূলের মানুষ থেকেই আমাদের শুরু করতে হবে। তাই আওয়ামী লীগ সেই নীতিতে বিশ^াস করে এবং সেটা করে যাওয়াই আমাদের প্রচেষ্টা।’
সমবায়ীদের জন্য জাতির পিতার গৃহীত পদক্ষেপ ও কর্মসূচি ’৭৫ এর পর আর বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেওয়াকে প্রধানমন্ত্রী ‘জাতির জন্য দুর্ভাগ্য’ আখ্যায়িত করে বলেন, বরং সেগুলো একটি লুটপাটের জায়গায় চলে এসেছিল। ’৯৬ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কতগুলো সমবায় ভিত্তিক প্রকল্প পুনরায় চালু করে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে ‘আমার বাড়ী, আমার খামার প্রকল্প’ গ্রহণ করে। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ২১ হাজার ১৪২টি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৫৬ লাখ ৪১ হাজার পরিবার উপকৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রতিশ্রুতির আলোকে সমবায় ভিত্তিক আদর্শ গ্রাম প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০টি গ্রামে ‘বঙ্গবন্ধুর গণমুখী সমবায় ভাবনার আলোকে’ ‘বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা পাইলট প্রকল্প’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
তিনি সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে এই প্রকল্প সফল করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘তাহলে এর ভিত্তিতে সব গ্রামকেই আমরা উন্নত করে দিতে পারবো। যাতে গ্রামের মানুষ আরো উন্নত জীবন পায় এবং সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।’
‘স্বাস্থ্য সম্মতভাবে মানুষ যেন জীবন ধারন করতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার গ্রামীণ জনগণের জন্য সুপেয় পানি এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ঋণের নামে উচ্চহারে সুদ নেওয়া নয়, তাঁর সরকার পল্লী জনগণের জন্য ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ব্যবস্থাও করছে।’
তিনি বলেন,‘আমার বাড়ি আমার খামারের সাথে সাথে আমরা প্রত্যেকটি দরিদ্র পরিবারকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র মাধ্যমে ছিন্নমূল মানুষদেরকে গৃহ ও ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। জুন ২০২০ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯টি পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭০টি আশ্রয়ণ সমবায় সমিতি নিবন্ধিত হয়েছে, যার সদস্য ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮২ জন। আমরা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় সমবায়ভুক্ত সদস্যদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি সরকারের আরো উন্নয়মমুখী এবং সাধারণ জনগণের জন্য নেয়া পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা ‘সমবায় ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন নিশ্চিতকরণ প্রকল্প’ এবং ‘দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম বিস্তৃতকরণের মাধ্যমে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা জেলার দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করেছি। মিল্ক ভিটার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জে দুগ্ধ কারখানায় গো-খাদ্য উৎপাদন, গুড়োঁ দুধ উৎপাদন কারখানা এবং মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, চরাঞ্চলগুলোতে বা উপকুলীয় অঞ্চলগুলোতে ভেড়া এবং মহিষ ভালভাবে লালন-পালন করা যেতে পারে, যেটা লাভজনক হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুগ্ধ কারখানা স্থাপন’ এবং ‘বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ কারখানা স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটানা প্রায় বার বছর আমাদের সরকারের গৃহীত নানাবিধ উদ্যোগের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের পল্লী এলাকায় অনেক দৃশ্যমান পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৫৫০/-শআ