চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: ইন্টার মিলানকে হারিয়ে মৌসুমের প্রথম জয় তুলে নিল রিয়াল মাদ্রিদ

264

মাদ্রিদ, ৪ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয়ের দেখা পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান এ্যাটাকার রড্রিগোর হাত ধরে এই জয় এসেছে। মঙ্গলবার ঘরের মাঠ এস্তাদিও আলফ্রেডো ডি স্টিফানোতে ইন্টার মিলানকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে গ্রুপ-বি’তে দুই ম্যাচ পর প্রথমবারের মত তিন পয়েন্ট সংগ্রহ করলো মাদ্রিদ। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে ৮০ মিনিটে রড্রিগো জয়সূচক গোলটি করেন।
দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও ইন্টার দারুনভাবে দুই গোল পরিশোধ করে লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল। এর আগে করিম বেনজেমা ও সার্জিও রামোসের গোলে ৩৩ মিনিটে মাদ্রিদ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লটারো মার্টিনেজ ও ইভান পেরিসিচের দুই অর্ধের দুই গোলে সফরকারীরা সমতায় ফিরে। ৩৩ মিনিটে রামোসের গোলটি ছিল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডারের শততম গোল।
কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে কাল ম্যাচ জয়ের নায়ক হিসেবে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছেড়েছে তরুন রড্রিগো। তার গোলেই জিনেদিন জিদানের দল এবারের মৌসুমে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল। অন্যদিকে তিন ম্যাচে জয়বিহীন ইন্টার মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। শেষ ১৬’র অবস্থান নিশ্চিত করতে ইন্টারের সামনে এখন পাহাড় সমান বাঁধা। প্রথম দুই ম্যাচে বরুশিয়া মনচেনগ্ল্যাডবাচ ও শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে জয় পায়নি মাদ্রিদ। ইন্টারও প্রথম দুই ম্যাচ থেকে মাত্র দুই পয়েন্ট অর্জন করেছিল।
এই গ্রুপে দিনের আরেক ম্যাচে শাখতারকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তিন ম্যাচে ৫ পয়েন্টসহ টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে জার্মান ক্লাব মনচেনগ্ল্যাডবাখ। কিয়েভের মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে হ্যাটট্রিক করেছেন ফরাসী এ্যাটাকার এ্যালাসানে প্লি।
মাদ্রিদের জয়ের পর কোচ জিদান বলেছেন, ‘এই তিন পয়েন্ট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে আমাদের জয়ী হতেই হতো। দারুন দক্ষতায় আমরা এই জয় নিশ্চিত করেছি। প্রতিপক্ষ বেশ কঠিন ছিল। যে কারনে ম্যাচটাও কঠিন হয়ে উঠেছিল।’
এন্টোনিও কন্টের ইন্টার এ নিয়ে গত সাত ম্যাচে মাত্র একটি জয় পেয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রিদও গত মাসে বেশ কয়েকটি পরাজয়ে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। যে জন্য কালকের ম্যাচটি দুই দলের কোচের জন্যই বেশ মর্যাদার ম্যাচ হয়ে উঠেছিল।
মার্টিনেজ বলেছেন, ‘এরপরেও আমাদের মাথা তুলেই থাকতে হবে এবং পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। এই ধরনের ম্যাচে খুব কম সংখ্যক ভুলই হয়। আমরা জানি এই প্রতিযোগিতাটি কতটা কঠিন। আমরা ভাল খেলেছি। কিন্তু সব সময়ই ছোট ছোট কিছু ভুল করেছি। যেটা এই ধরনের ম্যাচে কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে যায়।’
কন্টে বলেন, ‘রিয়ালের খেলোয়াড়রা অনেক বেশী অভিজ্ঞ। তারা জানে কিভাবে ম্যাচ জয় করে মাঠ ছাড়তে হয়। আমাদের মধ্যে সেই মানসিকতার কিছুটা অভাব রয়েছে।’
ইনজুরি আক্রান্ত রোমেলু লুকাকুর পরিবর্তে কাল ইন্টারের আক্রমণভাগে মাঠে নেমেছিলেন উজ্জীবিত পেরিসিচ। অন্যদিকে মৌসুমের দ্বিতীয়বারের মত মূল একাদশে জায়গা করে নিয়েছিলেন এডেন হ্যাজার্ড। যদিও ৬৪ মিনিটে মাঠ ত্যাগের আগে এই বেলজিয়ান খুব কমই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন। মাদ্রিদ থেকে এবারের মৌসুমে ৪০ মিলিয়ন ইউরোতে ইন্টারে এসেছেন রাইট-ব্যাক আচরাফ হাকিমি। মূল একাদশে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে হাকিমিও প্রথমবারের মত মাঠে নেমেছিলেন। তার বাজে একটি ব্যাক পাসেই বেনজেমা ২৫ মিনিটে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন। প্রথমার্ধে মাদ্রিদই ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়েছে। টনি ক্রুসের কর্ণার থেকে ৩৩ মিনিটে হেডের সাহায্যে মাদ্রিদের ক্যারিয়ারে শততম গোল পূরণ করেন রামোস। আর এতে ব্যবধানও দ্বিগুন হয়। হ্যাজার্ডের কাটব্যাক থেকে মার্কো আসেনসিও অল্পের জন্য ব্যবধান বাড়াতে পারেননি। পরবর্তীতে ইন্টারের দুটি কাউন্টার এ্যাটাক ভেস্তে যায়। নিকোলো বারেলা ক্রসবারে বল লাগানোর পর মার্টিনেজের একটি প্রচেষ্টা থিবো কোর্তেয়া রুখে দেন। দ্বিতীয় গোলের পর মাদ্রিদ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকে। কিন্তু ৩৫ মিনিটে বারেলার ব্যাকহিল থেকে লটারো কোন ভুল করেননি।
৬৪ মিনিটে হ্যাজার্ড মাঠ ত্যাগের পর ইন্টারের আত্মবিশ^াস ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তারই ধারাবাহিতায় মার্টিনেজের সহযোগিতায় পেরিসিচ ইন্টারের হয়ে সমতা ফেরান। কিন্তু ম্যাচের শেষ নাটকীয়তা তখনো বাকি ছিল। ব্রাজিলিয়ান দুই বদলী খেলোয়াড়ের হাত ধরেই শেষ হাসি হেসেছে মাদ্রিদ। ভিনসিয়ান জুনিয়রের বাম দিকের ক্রস থেকে রড্রিগো দারুন দক্ষতায় বল জালে জড়ালে ৮০ মিনিটে মাদ্রিদের জয় নিশ্চিত হয়।