মশা বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে আগামীকাল থেকে ডিএনসিসিতে চিরুনি অভিযান শুরু

219

ঢাকা, ১ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : ডেঙ্গু ও মশা বাহিত অন্যান্য রোগ থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে আগামীকাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে প্রতিটি ওয়ার্ডে আবারো বিশেষ পরিছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) শুরু হতে যাচ্ছে।
চিরুনি অভিযান আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ১০দিন চলমান থাকবে। তবে আগামী ৬ নভেম্বর শুক্রবার এই অভিযান বন্ধ থাকবে। অভিযানের কার্যক্রম সকাল ৯টা হতে ১২টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। ডেঙ্গু সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আগামীকাল থেকে অনুষ্ঠেয় চিরুনি অভিযান সম্পর্কে নগরবাসীকে অবহিত করতে ইতোমধ্যে ডিএনসিসির সর্বত্র মাইকিং করা হয়েছে।
চিরুনি অভিযান সর্বাত্মকভাবে সফল করতে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, গণমাধ্যম কর্মী এবং ডিএনসিসির সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানান। ডিএনসিসির সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদেরকে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। চিরুনি অভিযান চলাকালে সকল কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আতিকুল ইসলাম। সভায় তিনি বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যে কোনো মূল্যে সম্মিলিতভাবে অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরগণ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়–য়া, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহঃ আমিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল রাতে নগরবাসীর উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় মেয়র বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রার জন্য হঠাৎ করে নগরে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যদিও উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা অল্প তথাপি আমরা এই সমস্যাটাকে খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই বাড়ির ৪০০ গজ ব্যাসার্ধে র‌্যাপিড এ্যাকশন টিমের মাধ্যমে স্পেশাল পরিচ্ছন্ন এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি। যে সকল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আছে সেসকল হাসপাতালের চারপাশে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত আছে।’
আগামীকালের চিরুনি অভিযানকালে পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধনের পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। বিগত দিনে পরিচালিত চিরুনি অভিযানে যে সকল বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিলো তার তালিকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অ্যাপসে সংরক্ষিত আছে। এবার সেই তালিকা ধরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং কারো বাড়ির আশেপাশে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মশক নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটি কর্পোরেশন চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড নোভালিউরন ব্যবহার শুরু করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনই সর্বপ্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সংস্থা যে, এই সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব এবং কার্যকর লার্ভিসাইড নোভালিউরন বাংলাদেশে ব্যবহার করছে। এই লার্ভিসাইডটি একবার ব্যবহার করলে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলির ঠিকানা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে এই সকল কেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারবেন।
মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের বাহক এডিস মশা বাড়ি এবং বাড়ির আশেপাশের জমা পানিতে বংশ বিস্তার করে। তাই আপনার বাড়ির অভ্যন্তর এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখুন, তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে আমাদের নগরকে ডেঙ্গু মুক্ত রাখতে পারবো।’
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে পরিচালিত চিরুনি অভিযানের মতো এই চিরুনি অভিযান পরিচালনার উদ্দেশে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আবার প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের ১টি সেক্টরে অর্থ্যাৎ ১০টি সাবসেক্টরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এভাবে আগামী ১০দিনে সমগ্র ডিএনসিসিতে চিরুনি অভিযান সম্পন্ন করা হবে। প্রতিটি সাবসেক্টরে ডিএনসিসির ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১ জন মশক নিধনকর্মী, অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশককর্মী ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কিনা, কিংবা কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে আছে কিনা, কিংবা ময়লা-আবর্জনা আছে কিনা, যা এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক, তা পরীক্ষা করবেন। চিরুনি অভিযান চলাকালে ডিএনসিসির ৩ জন কীটতত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাগণ দিকনির্দেশনা দিবেন।
এই চিরুনি অভিযান চলাকালে যেসব বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা কিংবা এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাবে, তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি অ্যাপে সংরক্ষণ করা হবে। এর ফলে চিরুনি অভিযান শেষে ডিএনসিসির কোন কোন এলাকায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে তার একটি ডাটাবেস তৈরি হবে। ডাটাবেস অনুযায়ী পরবর্তীতেও তাদেরকে মনিটর করা হবে। আগামীকাল থেকে অনুষ্ঠেয় চিরুনি অভিযানে বিগত চিরুনি অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য (যা অ্যাপসে সংরক্ষিত আছে) অনুযায়ী চতুর্থ প্রজন্মের কীটনাশক নোভালিউরন প্রয়োগ করা হবে।
চিরুনি অভিযানের সাথে সাথে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্টও পরিচালিত হবে।
চলতি বছরে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৫০টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ২ হাজার ৬৮৬টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৮১০ টাকা জরিমানা করা হয়।