বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : বিদেশ ফেরতদের বাধ্যতামূলক পরীক্ষা ও কোয়ারান্টাইনে রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

349

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বঙ্গবন্ধু যুব দিবস-ভাষণ
বিদেশ ফেরতদের বাধ্যতামূলক পরীক্ষা ও কোয়ারান্টাইনে রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

তাঁর সরকার মুজিববর্ষে শতভাগ গৃহ আলোকিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ দিচ্ছি, রাস্তা-ঘাট করে দিচ্ছি, পাশাপাশি নৌপথ, রেলপথ, বিমান সব পথগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য আমাদের যুব সমাজের মাঝে যে মেধা, মনন আছে তা যেন তারা কাজে লাগাতে পারে।’
‘তারা যেন নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নিজেদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। শুধু দুই পাতা পড়েই চাকরির পেছনে ছোটাছুটি না করে।’ যোগ করেন তিনি।
যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থান শুরু বা স্টার্ট আপের জন্য মূলধন হিসেবে তাঁর সরকার বাজেটে বরাদ্দ রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইসিটি ক্ষেত্রটা এখন সব থেকে আধুনিক এবং সে জন্য য্বুকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুব সমাজকে বলছি, নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করতে হবে। আমিই বস হব। আমিই কাজ দেব। নিজের মধ্যে যে শক্তিটা আছে, সেটা কাজে লাগাতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সাররা যে কাজ করছে তারা যেন একটা সার্টিফিকেট বা স্বীকৃতি পান। কেননা তারাও অর্থ উপার্জন করছেন, সেটাও একটা কাজ।’
তিনি বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের একটা অসুবিধা আছে আমি জানি। তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে না, সার্টিফিকেটও নাই, স্বীকৃতিও নাই। সেটা নিয়েও আমরা সজিব ওয়াজেদ জয়ের সাথে (তাঁর ছেলে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা) আলোচনা করে, আমাদের আইসিটি মিনিস্ট্রি, যুব মন্ত্রণালয় এবং সকলে মিলে উদ্যোগ নিচ্ছি যারা এই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করবে তারা যেন একটা স্বীকৃতি পায়, বা সনদ পায়।’
তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজ ঘরে বসেই অনেক টাকা উপার্জন করতে পারছে। তবে, এটারও একটা স্বীকৃতির দরকার রয়েছে।
বিয়ের বাজারে মেয়ের বাবারা ফ্রিল্যান্সারদের মূল্যায়ন করে না, এমনকি ভাল স্কুল অভিভাবকদের আয়ের নিশ্চয়তা না পেয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি পর্যন্ত করতে চায় না-এমন অভিযোগও তাঁর কাছে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘কোন কাজে গেলে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের সোর্স অব ইনকাম দেখাতে পারেন না, সে জন্য আমরা এ বিষয়ে স্বীকৃতির চিন্তা-ভাবনা করছি, যে একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দেব। যাতে তারা কাজ করতে পারে।’
তাঁর সরকার কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন করে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুব সমাজ শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, চাকরি দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে, নিজেরা নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমরা যুব সমাজকে গড়ে তুলবো এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে গড়ে তুলবো। যাতে বাংলাদেশটা একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বিশে^ এগিয়ে যেতে পারে। আর আমাদের দেশটা যেন আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মমর্যাদাশীল হয়।
তিনি বলেন, ‘যুব সমাজের প্রত্যেককে আমি এই আহ্বানই করবো। এই বয়সটাই হচ্ছে কাজের বয়স, চিন্তার বয়স, মেধা বিকাশের সময় এবং আমরা আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখন কর্মসংস্থানের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি এ সময় রেডিও, টিভি এবং মোবাইল ফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়ে যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রযুক্তিকে মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসায় তাঁর সরকারের গ্রহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার প্রযুক্তি থেকে শুরু করে জনগণের আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান যেন বিকশিত হয় সেই পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। বহুমুখী শিক্ষার জন্য বিশ^বিদ্যালয় স্কুল, কলেজ, ভকেশনাল ইনষ্টিটিউট এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থা আমরা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার সাথে সাথে পরমুখাপেক্ষী যেন না হয়-সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
আজকে যারা তরুণ-যুবক ভবিষ্যতে এই দেশটি তারাই পরিচালনা করবে উল্লেখ করে ’৭৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছর এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক পরবর্তী আরও ৮ বছর জাতির জীবন থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
’৭৫ এর পর দেশ যে অবস্থায় ছিল, সে রকম ব্যর্থতায় পূনরায় পর্যবসিত হোক তাঁর সরকার চায় না, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেরকম অন্ধকার যুগ আর বাংলার মানুষের জীবনে যেন না আসে। তাঁরা যে আলোর পথে আজ যাত্রা শুরু করেছে, সেটাই যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।’
করোনাভাইরাসের কারণে সমগ্র বিশে^ স্থবিরতা চলে আসার প্রসঙ্গ টেনে তা মোকাবেলায় তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ধানকাটায় দেশের যুব সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়ায় তাঁদের প্রশংসাও করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর ফলে আমি মনে করি, আমাদের যুব সমাজের সম্মান দেশ ও বিদেশে অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই, সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। কারণ এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে কোন লজ্জা নাই।’
সরকারের জিরো টলারেন্সনীতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক- এই ধরনের কাজের সঙ্গে যেন কেউ সম্পৃক্ত না হয়। জঙ্গিবাদ, মাদক, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের যে অবস্থান সেটা কিন্তু কঠোর থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে কারো জীবনের কোন নিশ্চয়তা থাকে না।’
যুবকদের জন্য তাঁর সরকারের ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি চালুর উপকারিতাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে একটু নজর রাখা এবং তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় সংসদ টিভির মাধ্যমে অনলাইন এডুকেশনেরও পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ আজকে ৪১ বিলিয়ন এবং বিদেশ থেকে সরাসরি বিনিয়োগ আনারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
করোনার মধ্যেও অর্র্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য যা যা করণীয় তা তাঁর সরকার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে দেশবাসীকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬১০/-এএএ